• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৭ অপরাহ্ন

আগাম সবজি চাষে ক্ষতি, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় কৃষকরা

স্টাফ রিপোর্টার / ১৭২ Time View
Update : রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাবনার কৃষকেরা আগাম সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে আবাদি জমি তলিয়ে গেছে, ফলে কৃষকরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, অপরিকল্পিত জলাশয় ভরাট ও পানির সঠিক নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৭৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
আগাম সবজি চাষের জন্য সারা দেশে পাবনার সুনাম রয়েছে। জেলার সদর উপজেলা, আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদীসহ অধিকাংশ এলাকায় চাষ হয়- শিম, মুলা, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন শাকসবজি। জেলার চাহিদা পূরণ করে এসব সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। দূরদূরান্ত থেকে এখানে পাইকাররা এসব শাকসবজি কিনতে আসেন। তবে সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।
ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া এলাকার কৃষক আমজাদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ৪ বিঘা জমিতে আগাম শিমের চাষ শুরু করেছিলাম। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছিল। শিম বিক্রির উপযোগী হয়েছিল। বাজারে শিমের চাহিদা ও মূল্য ভালো থাকায় অল্প কিছু শিম বিক্রিও করেছি। কিন্তু টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমার খেত তলিয়ে গেছে। শিমগাছে পচন ধরেছে এবং শিমের ফুল ঝরে পড়ছে। এতে আমার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে চাষ করার মতো আর্থিক অবস্থাও নেই।’
অপরিকল্পিতভাবে জলাশয় ভরাট ও পুকুর খননের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ফসল, এমনটি মনে করছেন কৃষকরা।
বাঁশেরবাদা এলাকার কৃষক আলেপ খাঁ বলেন, ‘এই কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমার ৩ বিঘা জমির আমনের খেত পুরোটাই তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে সব ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে জমিতে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা সম্ভব নয়।’
পাবনা সদরের দাপুনিয়া এলাকার কৃষক মো. শিপন মোল্লা বলেন, ‘এলাকার অধিকাংশ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা সরকারি জলাশয়গুলো দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ফলে অল্প বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে যায় ফসলি জমি।’
দাপুনিয়া এলাকার বাসিন্দা রিপন মোল্লা বলেন, ‘একদিকে জলাশয় ও জলা অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। এমনকি ইছামতিসহ অন্য শাখা নদীগুলো দখলের ফলে পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নেই, যার ফলে জনসাধারণের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ফসল উৎপাদনে।’
টানা বৃষ্টিতে কৃষকদের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে কৃষি বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পাবনায় প্রচুর পরিমাণে আগাম সবজির চাষ হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৯টি উপজেলায় ১১ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আগাম সবজির চাষ হয়েছে। টানা বর্ষণে নষ্ট হয়েছে ৭৩ হেক্টর জমির ফসল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category