জুলাই আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি নেতারা ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে তারা অবস্থান করছেন। বিদেশে বসে আরামে ঈদ উদযাপন করেছেন পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, এসব নেতা দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন সেখানে। যেসব দেশে তারা পালিয়ে বা আত্মগোপনে আছেন, সেখানে বসে পূণরায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।
এ নিয়ে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার সঙ্গে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে যুক্তরাজ্যে ঈদ উদযাপনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকে দেশেই মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িছাড়া অবস্থায়।
যদিও অপর একটি সূত্র জানায়, ভারতে বসে বাংলাদেশে আত্মগোপনে থাকা কর্মীদের এবার ঈদের বকশিশের নামে টাকা পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। মূলত হুন্ডির মাধ্যমে তারা যার যার নির্বাচনি এলাকায় এই টাকা পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে সাবেক ৪ মন্ত্রীকে একই ফ্রেমে দেখা যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে দেখতে মঙ্গলবার ওই সাবেক চার মন্ত্রী হাসপাতালে যান। এছাড়া যুক্তরাজ্যের একটি নামকরা রেস্টুরেন্টে জমকালো আয়োজনে ঈদ উদযাপন করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকে। তারা সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে সেসব অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলেছেন, যা মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এই নেতারা ক্ষমতায় থাকার সময় অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাদের অনেকেই কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ পরিবারসহ আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বিলাসবহুল গাড়ি কিনে বিদেশি শহরগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ভারতে বসে ঈদ বকশিশ : দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের মাথায় ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঈদ উদযাপন করেছেন আওয়ামী লীগসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্যদের ছোট একটি অংশ কারাগারে। তবে বেশিরভাগ সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্যরা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নির্বিঘ্নে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা আছেন দেশের ভেতরে আত্মগোপনে। গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও গত বছরের ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, রাজনীতির মাঠে ফের সক্রিয় হওয়ার অংশ হিসাবে দলটির পলাতক নেতারা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার পরীক্ষিত কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। বিশেষ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া নেতারাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সরব এবং সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন। কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে ঈদ বকশিশের নামে টাকাও পাঠিয়েছেন অনেক মন্ত্রী ও এমপি।