নেপাল কিংবা ভারতের সিকিমে নয়, বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখে দেখা মেলে পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই দেশের মাটি থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসছেন তেঁতুলিয়ায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে হিমালয়কন্যা খ্যাত এ জনপদ।
অক্টোবর ও পুরো নভেম্বর মাসে মেঘমুক্ত উত্তরের আকাশে তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখে মায়াবী পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে উত্তর আকাশে মেঘ থাকায় এবারে অক্টোবর মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলেনি। নভেম্বরের শুরু থেকে কয়েকদিন তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলেছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেও কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় গতকাল শুক্রবার সারাদিন তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেছে।
সকালের রক্তিম রোদ কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর যেন ঠিকরে পড়ে। সূর্যের কিরণের তেজ বাড়তে থাকলে দেখা মেলে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিন্ন ভিন্ন মায়াবী রূপ। একই অঙ্গে অনেক রূপ এ কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রঙ ধারণ করে। ভোরের প্রথম সূর্যের কিরণ কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় যখন স্পর্শ করে তখন শ্বেতশুভ্র এ পর্বতটি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত লাভার মতো লাল। রোদের তেজ বাড়তে থাকলে মিলিয়ে যেতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শেষ বিকেলেও আরেকবার দেখা দিয়ে সন্ধ্যায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘার বিধৌত রূপের ঐশ্বর্য ছাড়াও পর্যটকদের দৃষ্টি জুড়াবে তেঁতুলিয়ার সীমান্ত অববাহিকার নানা দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান। ঐতিহাসিক ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নার, সমতলের চা বাগান, চায়ের কারখানা, আঁকাবাঁকা নদী, নদী থেকে পাথর তোলার দৃশ্য, পাথরের জাদুঘর, ভীতরগড়ের দুর্গনগরী, ইংরেজ আমলের স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি, মোগল আমলের মসজিদ, সুফিদের বারো আউলিয়া মাজার শরিফ, ৫শ বছরের পুরনো মহাশক্তি পীঠ বদেশ্বরী মন্দিরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। আরও আছে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী আইসিপি পয়েন্টে বিজিবি-বিএসএফের জয়েন্ট রিট্রিটের নান্দনিক প্যারেড দর্শনের সুযোগ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন জানান, পঞ্চগড় একটি শান্তিপূর্ণ পর্যটন এলাকা। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকেই এখানকার পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় দেখার সুযোগ হয়। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে সর্বদাই ট্যুরিস্ট ও মডেল থানা পুলিশসহ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্ত ঋতুতে দেশের একমাত্র সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ উপভোগ করতে প্রচুর পর্যটক ছুটে আসেন এ এলাকায়। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও থাকার ব্যবস্থা হিসেবে রেস্ট হাউজ রয়েছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি-বেসরকারি পর্যটকসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।