• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে লাখো মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার / ২৩ Time View
Update : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫

চৈত্রের দুপুরে সূর্যে তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছে লাখো মানুষের ঢল। সবার হাতে দুই হাজার কিলোমিটার ‍দূরের ভূমি ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। মূলমঞ্চ থেকে একটু পর পর ঘোষণা হচ্ছে, মাঠের ভেতরে আর কোনও যায়গা নেই। এই মুহূর্তে যারা যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানেই বসে পড়ুন।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন এবং ইসলামি বক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্যোগে কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

বিকাল ৩টার কিছু সময় পরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক।

এর আগে আজ সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। কাওরান বাজার মোড়, বাংলামোটর, কাকরাইল মোড় এলাকা থেকে দলে দলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছে মানুষ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত ও বাইরের জেলা থেকে বাস, মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে মানুষ এসে জড়ো হন। পরে তারা পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা দেন।

সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং ফিলিস্তিনি পতাকা দেখা গেছে। কেউ কেউ কালেমা খচিত ফিতা মাথায় বেঁধেছেন। অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশাপাশি জাতিসংঘের কাছেও জবাবদিহি দাবি জানান।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ, এমনকি তরুণ প্রজন্মেরও উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

মিরপুর থেকে আসা মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মোহাম্মদ তায়েব বলেন, ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চলছে, তার বিরুদ্ধে আমরা মুসলমান হিসেবে চুপ থাকতে পারি না। তাই এই সংহতি সমাবেশে এসেছি।

সাভার থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, আমি দল করি না, ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও নই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না আমাকে নাড়া দিয়েছে। তাই এখানে এসেছি।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম ইসলাম বলেন, সরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজকে জাগাতে হবে। বাংলাদেশ থেকেও সেই আওয়াজ তুলতে হবে।

এদিকে এই জনসমাগমের মধ্যেও রাস্তার গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি সড়কে। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এবং কাকরাইল মসজিদ মোড়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়া জনতাকে সেসব জায়গায় তল্লাশি করা হচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনেও সংগঠনের ব্যানার বা পতাকা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কোনও বস্তু যাতে কেউ সমাবেশস্থলে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য এই তল্লাশি। তল্লাশির সময় কালো কাপড়ে কালেমা লেখা কোনও কাপড় বা পতাকা পাওয়া গেলে সেগুলো রেখে দিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

কাকরাইল মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র এএসপি (পিএমও) মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছ। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। কেউ যাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ব্যানার বা পতাকা নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমরা সজাগ আছি। কর্মসূচিতে যাওয়া ব্যক্তিরা আমাদের সহযোগিতা করছেন, আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি না হয় এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করছি।’

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। কর্মসূচি চলবে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category