• মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন

বকশিশ না দেওয়ায় অক্সিজেন চালু করেনি নার্স, নবজাতকের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট / ৬৫ Time View
Update : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

‘টাকা না দিলে তারা অন্য সেবা দূরে থাক অক্সিজেন পর্যন্ত দেয় না। রোগী মারা গেলেও তাদের কোনো আফসোস নেই। তাদের প্রয়োজন শুধু টাকা। মানুষের জীবনের চেয়ে তাদের কাছে টাকার দাম বেশি। টাকা না দেওয়ায় তারা আমার নবজাতককে অক্সিজেন চালু না করে হত্যা করেছে।’ কথাগুলো বলেছেন শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত নবজাতকের পিতা বেলাল উদ্দিন।

পেশায় দিন মজুর বেলাল উদ্দিন জানান, শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে অক্সিজেনের পাইপটি খুলে যায়। ২০০ টাকা দিলে তা লাগিয়ে দেয়। নার্স এবং বয় উভয়ই টাকা নিয়েছেন। সকালে আমরা তাদেরকে টাকা দিতে পারিনি। তাই তারা আমাদেরকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়। এই সময়ের মধ্যে আমার নবজাতক শিশু পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। এটা খুন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

তিনি জানান, তারা কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড জারুল বুনিয়া এর বাসিন্দা। এক সপ্তাহ আগে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে তার শিশু সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর নিউমোনিয়া দেখা দিলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গত ৯ মার্চ তারা চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে শিশুকে ভর্তি করান। এখানে এসেই তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তারা। প্রতি পদে পদে টাকা। ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে টাকা, স্যালাইন লাগাতে টাকা, অক্সিজেন চালু করতে টাকা, অক্সিজেনের বোতলের যে অংশ থেকে পাইপের মাধ্যমে শিশুর নাকে অক্সিজেন সরবরাহ হয় সেখানে পানি দিতে টাকা। হাসপাতাল সরকারি হলেও প্রাইভেট ক্লিনিককেও হার মানায়। টাকা দিতে একটু গড়িমসি করলেই শুধুমাত্র শিশুকে রেখে শিশুর মা, বাবা খালা সবাইকে বের করে দেওয়া এবং দুর্ব্যবহার যেন এখানকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের সবাই সবকিছু দেখছে। কিন্তু কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ যেন এক মগের মুল্লুক।

শিশুর মা মোহসেনা বেগম জানান, শনিবার সকাল ৭টার দিকেই তাদেরকে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তিনি তখন তাদেরকে বলেন, আমার শিশুর অবস্থা তো ভালো না। তার অক্সিজেনের পাইপের সংযোগে পানি শুকিয়ে গেছে। সেখানে পানি দিতে হবে। তখন উপস্থিত নার্স এবং বয়রা তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়ে বলে, সেসব আমাদের কাজ। তুমি কী বুঝবে? বের হও। তিনি এক সময় বাথরুমে লুকিয়ে ওয়ার্ডে থাকার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে খোঁজে তাকে বের করে দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা ওয়ার্ডের বাইরে ছিলেন। ১০টার দিকে গিয়ে দেখেন তাদের সন্তান আর নেই। পরপারে চলে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তছলিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার খবর তিনি শুনেছেন। এই ঘটনায় তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে হাসপাতালের একজন সহকারী পরিচালক, শিশু বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে রাখছেন বলে জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category