একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন অষ্টম শ্রেণি পাস করা শেফালী আক্তার। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু এরই মধ্যে একই পদে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেছেন এমন প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি চলে যায় শেফালী বেগমের। শিক্ষাগত অযোগ্যতার কারণে চাকরি চলে যাওয়ায় লজ্জা পান তিনি, তবে দমে যাননি। প্রতিজ্ঞা করেন যে করেই হোক এইচএসসি পাস করবেন। যে কথা সেই কাজ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। প্রবল মনোবল আর ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, তার ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদও এবার এইচএসসি পাস করেছেন। ছেলের সঙ্গে মায়ের এমন সাফল্যে খুশি এলাকাবাসীও।
শেফালী আক্তার ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি কারিগরি শাখা থেকে পেয়েছেন জিপিএ ৪.৩৩ এবং মানবিক শাখা থেকে তার ছেলে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছেন। শেফালী আক্তার ফুলবাড়িয়া কালাদহ জনতা মহাবিদ্যালয় কারিগরি শাখা থেকে ও ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ ঢাকার মিরপুরে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের মানবিক শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
২০২০ সালে চাকরি চলে গেলে শেফালী আক্তার স্থানীয় শুশুতি বাজারে সাফা মেডিকেল সেন্টারের রিসিপশনে বিকেলের শিফটে কাজ নেন। কাজের পাশাপাশি আছিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কারিগরি শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তখন তার ছোট ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ শুশুতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বড় ছেলে শাকিল হাসান মৃদুল তখন অনার্সের শিক্ষার্থী। সেই থেকে রিসিপশনে কাজ করার পাশাপাশি ছেলেদের সঙ্গে নিজেও লেখাপড়া চালিয়ে যান। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ফুলবাড়িয়া কালাদহ জনতা মহাবিদ্যালয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘শেফালী আক্তার পরিশ্রমী নারী। পার্টটাইম চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন। তিনি যে পড়াশোনা করছেন এলাকার অনেকেই জানতেন না। আমরা ভাবতেও পারিনি তিনি এত ভালো ফল করবেন। তার এমন ফলে আমরা সবাই খুশি।’ আজিজুল হক নামে আরেকজন বলেন, ‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শেফালী আক্তার আবারও প্রমাণ করলেন। তাকে দেখে আরও অনেকে পড়ালেখায় উৎসাহিত হবেন বলে মনে করি। মা-ছেলের সাফল্যের আমরা আনন্দিত।’
পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাইলে শেফালী আক্তার বলেন, ‘আমার শিক্ষাগত কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। সে জন্য চাকরি চলে যায়। এতে স্বামী-সন্তানদের কাছে লজ্জায় পড়ে যাই। পরে সিদ্ধান্ত নেই লেখাপড়া করব। ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়েই এইচএসসি পাস করেছি।’
শেফালী আক্তারের স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরি চলে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী খুব কষ্ট পেয়েছিল। তাই পড়াশোনা করেছে। ছেলের সঙ্গে তার পাসে আমি খুব খুশি। শেফালী যদি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় আমি বাধা দেব না।’