ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (অব.) (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সরকারের সর্বোচ্চ পদে বহাল থাকার সময়ে সরকারি প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হয়েও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। অন্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে সায়মা ওয়াজেদকে প্লটটি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছেন, যা দুদকের তফসিলভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের প্লট বরাদ্দ নীতিমালার ১৩/এ ধারার ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাই শেষে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে সায়মা ওয়াজেদের নামে নেওয়া প্লটের বিষয়ে মামলা করা হলো। বাকিদের নেওয়া প্লটের বিষয়েও মামলা হতে পারে। এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলার বা ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎসহ ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও দুটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে ১৮ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন উপপরিচালক সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। গত ২২ ডিসেম্বর উপপরিচালক সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন একই টিমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, আমেরিকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। এফবিআইয়ের তদন্তে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি উন্মোচিত হয়। বিশেষ করে তার নামে থাকা হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা পাচারের তথ্য উঠে আসে। এফবিআই তাদের লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং প্রমাণ পেয়েছে যে সেখানে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম এবং মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়েছে।