খুলনায় সাড়া ফেলেছে ‘নিরাপদ কৃষি বাজার’। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করেই বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত শাকসবজি, ফল ও কৃষি পণ্য বিক্রি করা হয় এই বাজারে। এছাড়া দাম কম ও প্রাচীন স্থানীয় জাতের কৃষি পণ্য হওয়ায় এই বাজারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের।
নগরীর শিববাড়ি মোড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসে ‘নিরাপদ কৃষি বাজার’। বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি পিকআপে শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিক্রি করছেন তিনজন কৃষক। পিকআপ ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা পণ্য ওজন দেয়ার কাজে ব্যস্ত।
এই কৃষি বাজারে বিক্রি করা হয় মেটে আলু, বেগুন, ধুন্দল, পালন শাক, লাশ শাক, পেঁপে, কচু, কলার মোচা, কচুরলতি, কলমি শাক, শাপলা, কুশি, উছতে, লাউ, কাচকলা, কাঁচা মরিচ, কাঁচা বিচিকলা, কুমড়া, আলু, পাকা কলা, হাঁস ও মুরগির ডিমসহ বিভিন্ন শাকসবজি। ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে সেগুলো কিনছেন।
বিক্রেতা দীপংকর কবিরাজ জানান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লোকজ’ এর অনুপ্রেরণায় ৪০টি কৃষক সংগঠনের সমন্বয়ে ‘মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন’ গঠন করা হয়। মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন ব্যতিক্রমী এই নিরাপদ কৃষি বাজারের উদ্যোক্তা। তিনি জানান, বটিয়াঘাটার কাতিয়ানাংলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক দিয়ে কৃষি পণ্য উৎপাদন করে। এই জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক তারা নিজেরই তৈরি করেন। কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। সে কারণে এগুলো নিরাপদ। এছাড়া এগুলো সবই প্রাচীন স্থানীয় জাতের, কোনো হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল ফসল নেই।
দীপংকর কবিরাজ জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে নিরাপদ কৃষি বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পিকআপে করে গ্রামের কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষি পণ্য নিয়ে শিববাড়ি মোড়ে আসেন। এর ফলে গ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা যে লাভ পেতো তা সরাসরি কৃষক পায়।
সবজি কেনার পর আব্দুল কাইয়ুম নামে এক ক্রেতা বলেন, এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি ব্যানারে লেখা নিরাপদ কৃষি বাজার। সে কারণে এখান থেকে কিনলাম। দাম অন্য বাজারের তুলনায় কিছুটা কম। তবে এখানকার সবকিছু বেশ টাটকা দেখাচ্ছে।
মনিরা সুলতানা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ইজিবাইক থেকে নামার পর এটা চোখে পড়ল। এখান থেকে দেশি হাঁস-মুরগির দুই ডজন ডিম কিনলাম।
লোকজের সমন্বয়কারী পলাশ দাশ জানান, প্রত্যেক সপ্তাহে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন কৃষকের ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি কৃষি পণ্য, হাঁস-মুরগির ১৫০ থেকে ২৫০ ডিম আনা হয়। তারা যে পণ্য নিয়ে আসেন তার সবই বিক্রি হয়ে যায়। এই ফসলগুলোতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এছাড়া স্থানীয় প্রাচীন জাতের হওয়ায় বাজারের অন্যান্য কৃষিপণ্যের তুলনায় স্বাদ অনেক ভালো।
তিনি জানান, কৃষকদের আরও বড় পরিসরে এই কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।