সিলেট নগরীতে সার্ভিস গাড়ির সংখ্যা কয়েক হাজার হলেও এইগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট লাইসেন্স নেই। এই গাড়িগুলো নিয়মিত সড়কে চলাচল করলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি নেই। ফলে নগরীতে সড়ক দখল করে অবৈধভাবে স্ট্যান্ড করে বেআইনিভাবে ‘সার্ভিস গাড়ি’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশের ধারা ২ (৩) অনুযায়ী, প্রাইভেট গাড়িকে সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী সার্ভিস গাড়িগুলোর রং হতে হবে কালো ও হলুদ এবং নম্বর প্লেটের মধ্যে সাদার মধ্যে কালো লেখা থাকতে হবে। কিন্তু সিলেট জেলা বা নগরীতে বর্তমানে গুটি কয়েক কালো রংয়ের মাইক্রোবাস গাড়ি ছাড়া কোনো কালো বা হলুদ রংয়ের সার্ভিস গাড়ি নেই। বাণিজ্যিকভাবে গাড়ি ব্যবহারের জন্য অবশ্যই গাড়ির মালিককে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি থেকে লাইসেন্স নেওয়ার কথা থাকলেও এই নিয়ম না মেনেই সড়কে সার্ভিস গাড়ি চালানো হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের ব্যবহার। বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এই প্রাইভেট গাড়ির বেশির ভাগই বেআইনিভাবে ভাড়ায় সার্ভিস গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বৈধ অবৈধভাবে হাজার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রতিদিন চলছে সিলেটের সড়কে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, যা পুরোপুরি অবৈধ। নগরীর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যান যানবাহন চলাচল করার ফলে দিন দিন যানজট সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেট নগরীর অন্যতম ব্যস্ত ভিআইপি সড়ক হচ্ছে চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়ক। শুধু এই সড়ক রয়েছে ৫টি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। সড়কের দুই পাশ দখল করে অন্তত ২০০টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়াও নগরীর সুবিদবাজার, চৌহাট্টা, শাহী ঈদগাহ, নাইওরপুল, শাহজালাল ব্রিজ, ধোপা দীঘিরপার, টিলাগড়, কদমতলী, মদিনা মার্কেট, তেমুখী ওসমানী এয়ারপোর্ট, শহরতলীর কুমারগাঁও, শাহপরান ও চণ্ডিপুল এলাকায় ২৫টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। এই স্ট্যান্ডগুলো থেকেই সার্ভিস গাড়ি সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পুস্ট্যান্ড।
জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মইনুল ইমলাম বলেন, ‘নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০ গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে সার্ভিস গাড়ি অনেক কম। আনুমানিক ২০০ আছে। বাণিজ্যিক লাইসেন্সবিহীন ‘সার্ভিস গাড়ি’ চালানো ঠিক না। তবে এ ব্যাপারে গাড়ির মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
সিলেট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘যে শর্ত অনুযায়ী সার্ভিস গাড়ি সড়কে চলার কথা, সেগুলো মানা হচ্ছে না। পাশাপাশি বাণিজ্যিক লাইসেন্সবিহীনভাবে অসংখ্য গাড়ি সার্ভিস গাড়ি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরাও মাঝে মাঝে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করি।’
ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিলেটে কোনো কালো রংয়ের গাড়ি এখনো আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এখানে অবশ্যই অনেক সার্ভিস গাড়ি আছে। সার্ভিস গাড়ি সড়কে চালাতে গেলে অবশ্যই বাণিজ্যিক লাইসেন্স লাগবে। আমরা এ ব্যাপারে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’