বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন মু. সেলিম উদ্দিন। একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ এই আসন নিজেদের করে নিতে চায় সাবেক ছাত্রনেতা সেলিম উদ্দিনের হাত ধরে । সৎ, ত্যাগী ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে এই আসনে সেলিম উদ্দিনের বিকল্প ভাবছেনা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। দলের হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন উল্লেখ করে মু. সেলিম উদ্দিন জানান, বিগত দিনে জোটের শরিক দল হিসেবে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম এবং জামায়াতের দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।কিন্তু সে সময় তিনি কোন ধরনের সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেন নি। ইচ্ছে করলে তিনি ব্যাংক ঋণ নিয়ে বড় ব্যবসা বাণিজ্য করে আয়েশী জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তিনি সেদিকে পা বাড়াননি। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতি আর দেশের কল্যাণের পথে নিজেকে আরো বেশী নিয়োজিত করেন তিনি। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) নির্বাচনী আসনে প্রার্থী হতে তাকে নির্দেশনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলের হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর দুই উপজেলার সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন মু. সেলিম উদ্দিন। তিনি জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। গত এক সপ্তাহের ব্যাবধানে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। নিজ দলের কর্মী এবং সমর্থকদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে তাদের দাবীর কথা শুনেছেন। সেই সাথে আগামী দিনে ক্ষমতায় আসার সুযোগ হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুই উপজেলার সড়ক সংস্কারসহ প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবেন-এমন বার্তাও দিচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ বলছেন, সেলিম উদ্দিনের বিয়ানীবাজার সফর পুরোটাই সাংগঠনিক। সংগঠনের কার্যক্রম তরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি বিয়ানীবাজার আসছেন এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে যোগ দিচ্ছেন। তাছাড়া নির্বাচন কবে হবে সেটা এখনো পরিস্কার হয়নি। সময় আসলে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো।
জানা যায়, বিগত দিনে এই আসনে চারদলীয় জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন সিলেট জেলা দক্ষিণের তৎকালীন আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান। তবে মাওলানা হাবীবকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী সুবিধা করতে পারেনি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেলিম উদ্দিনকে কাছে পেয়ে বেশ উজ্জীবিত জামায়াতের যুব সমর্থকরা। একজন কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ের কথা বুঝতে পারবেন এমনটাই তাদের প্রত্যাশা। দলটির বিপুল সংখ্যক কর্মী এবং সমর্থকেরা প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে দলকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠ গোছানোর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আর সেই কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিয়ানীবাজারের এক নিভৃত জনপদের সন্তান সেলিম উদ্দিন। প্রকাশ্যে না বললেও মুলত তাঁকে নিয়েই এই আসনে কর্মপরিকল্পনা করছে জামায়াতে ইসলামী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হলে সেলিম উদ্দিন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে দাবি তার সমর্থকেরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা এখনো মাঠ গোছানো শুরু করেননি। সে হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে ধারণা করছেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী এবং সমর্থকেরা। দলটির প্রথম সারির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান তুলে ধরতে ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজারের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন মু. সেলিম উদ্দিন। পাশাপাশি ব্যাবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আলেমসমাজ এবং বিভিন্ন ইউনিয়নের বর্তমান এবং সাবেক চেয়ারম্যানদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এর বাহিরে আমরা সাংগঠনিকভাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক কাজ গুলো গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমাদের কর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়নে ভোটারদের তালিকা তৈরি করে তাদের কাছে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন আদায় করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে মু. সেলিম উদ্দিন বলেন, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি মাঠে কাজ করছি। নির্বাচনের সময় ভোটাররা যদি আমাকে বিবেচনা করে তাহলে আমি মানুষের খেদমত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি এই এলাকার দীর্ঘ কয়েক বছরের সমস্যা গুলো সমাধান করার জন্য মানুষ আমাকে সেই সুযোগ দেবে।