• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

স্টাফ রিপোর্টার / ১৫ Time View
Update : সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সোনালি ফসল বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে হাওরপাড়ের কিষান-কিষানিরা। পহেলা বৈশাখ থেকে টুকটাক শুরু হলেও বর্তমানে পুরোদমে শুরু হয়েছে ধান কাটা। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় খুশি মনে ধান ঘরে তুলছেন চাষিরা।

সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা গেছে, কেউ শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে ট্রলি বা গরুর গাড়ি দিয়ে ধান খলায় এনে মাড়াই মেশিনে ধান মাড়াই করছেন, কেউ আবার হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খেতেই ধান কাটা ও মাড়াই করে ধান খলায় নিয়ে আসছেন। খলায় খলায় নারী-পুরুষ, স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছে। আবার সেই ধান মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে কৃষক। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন হাওরপাড়ের বোরো চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। শনি ও মাটিয়ান হাওরসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছোট বড় ২৩টি হাওরে ১৭ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদ ও পরিবেশে ভাল থাকায় ৬৮ হাজার ৬১৮ টন ধান উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য ৩০০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি। এসব ধান তুলতে শ্রমিকের পাশাপাশি উপজেলায় ৭০টির উপরে কম্বাইন্ড হারভেস্টার রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলায় ১৫ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ও জেলার উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা ও ১৮ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কথা থাকলেও বাস্তবে আবহাওয়া ভালো ও স্বাভাবিক থাকায় স্বস্তিতে হাওরপাড়ের কৃষকরা।

মাটিয়ান হাওরপাড়ের বড়দল গ্রামের কৃষক সামাইয়ূন কবির জানান, তিনি মাটিয়ান হাওরে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বিভিন্ন জাতের ১৪ কেয়ার ধান চাষ করেছেন। ১০ কেয়ার কেটে শুকিয়েছেন। তার প্রতি কেয়ারে ২০-২১ মণ ধান হবে।

একই হাওরপাড়ের রতনশ্রী গ্রামের কৃষক আশিকনুর জানান, হাওরাঞ্চলে যে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা কিছুটা আতঙ্কে ছিলাম। পাহাড়ি ঢল যদি নামে তাহলে আমাদের ফসলগুলো হুমকিতে পড়বে। তবে বর্তমানে আবহাওয়া অনেক ভালো আছে। তাই সবাই স্বস্তিতে আছে।

শনির হাওরপাড়ের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের আহমাদুল জানান, তিনি ১২ কেয়ার জমিতে ধান চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে দুই কেয়ার ব্র্যাক-৭৭৭ জাতের ধান কেটে শুকিয়ে ঘরে তুলেছেন। তার কেয়ার প্রতি ২০ মণ ধান হবে। বাকি জমিতেও ভালো ফলন হয়েছে। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। একই গ্রামের হাওর পাড়ের কলেজ শিক্ষার্থী স্বর্ণাভ হাসান জানান, প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখের শুরুতে বাড়িতে এসেছে বৈশাখী ধান উঠানোর কাজে কৃষক বাবাকে সহযোগিতা করতে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানের খলাতে ধান ও খড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি কাজে নাহিদের মতো সহযোগিতা করছেন হাওরপাড়ের হাজারও শিক্ষার্থী।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরোদমে কাটা শুরু হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে চাষিরা ১০-১৫ দিনের ভেতরে সম্পূর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারবে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম জানান, তিনি প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন হাওরে এ বছর খুবই ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটতে ন্যায্যমূল্যে নিতে হারভেস্টার মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category