• শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

২ টাকায় চা-নাশতা বিক্রি করে ভাইরাল নূর ইসলাম

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৫০ Time View
Update : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যখন পণ্যসেবার দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন স্রোতের বিপরীতে হাঁটছেন ৭০ বছর বয়সী চা-দোকানি নূর ইসলাম। ঠাকুরগাঁও সদরের জামালপুর ইউনিয়নের চৌরঙ্গীবাজারে ছোট একটি টিনের ছাউনির দোকান আছে তার। এখানে তিনি চায়ের পাশাপাশি কয়েক ধরনের নাশতা বিক্রি করেন। ক্রেতা যা-ই খান না কেন, দাম দিতে হয় সর্বনিম্ন ২ টাকা। চায়ের দাম প্রতি কাপ ২ টাকা। এক পিস নিমকি কিংবা ছোট এক প্লেট সেমাই বা ছোলা ভুনার দাম মাত্র ২ টাকা। তবে ক্রেতা চাইলে টাকা বেশি দিয়ে পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন।

২০ বছর ধরে একই জায়গায় চা-নাশতা বিক্রি করা নূর ইসলাম মনে করেন, উত্তরাধিকার কেউ না থাকায় সম্পদ রেখে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন তিনি মনে করেন না। এই দামে বিক্রি করেও তার লোকসান হয় না। অল্প খরচে খাবার খেয়ে মানুষের মুখে ফুটে ওঠা তৃপ্তির হাসি তাকে আনন্দিত করে।

এত কম দামে কীভাবে বিক্রি করেন, এমন প্রশ্নে বৃদ্ধ চা-দোকানি নূর ইসলাম বলেন, ‘এই বাজারে ২০ বছর ধরে চা-নাশতা বিক্রি করছি। ২ টাকায় চা ও ২ টাকায় নাশতা দেওয়ায় অন্য দোকানিরা মাঝেমধ্যেই এসে কথা শোনায়। আমি সবাইকে একটি কথাই বলি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবে মানুষকে সস্তায় সেবা দিয়ে যাবো। এক টাকাও দাম বাড়াবো না।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত সস্তায় পণ্য বিক্রি করে লাভ হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ব্যবসা শুরু করেছিলাম তখন এই দাম নির্ধারণ করেছিলাম। এখন আগের মতো লাভ হয় না, এটা সত্য। তবে এই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে যায়। এভাবে বিক্রি করে তিন সন্তানের বিয়ে দিয়েছি। আমার তো খাওয়ার মানুষ নেই। তাই বেশি লাভের প্রয়োজন হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই ভাঙা দোকানে এসে যখন কোনো ক্লান্ত মানুষ সস্তায় খাবায় খেয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়, ওই হাসিটা আমার ভালো লাগে। এ ছাড়া স্থানীয় অনেক গরিব মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্ররা এসেও চা পান করে, নাশতা খায়। তাদের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক হয়ে গেছে। দাম বাড়ালে এই হাসিমুখগুলো আর দেখতে পাব না। তাই দাম বাড়াই না।’

চা-দোকানি নূর ইসলামের স্ত্রী হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমাদের থাকার মতো নিজের বাড়ি নেই। বাজারে একজনের এক খণ্ড জমিতে দোকান করি। রাত হলে এখানেই থাকি। কেউ দোকানে চা খেতে এলে মনে হয় তিনি আমার মেহমান। আমাদের ভালোবেসে তারা এখানে এসেছেন। চা-খাবারের দাম কম হওয়ায় তারাও তৃপ্তিসহকারে খাবার খান। দেখে ভালোই লাগে।’ সস্তায় অন্যকে খাইয়ে স্বামীর মুখে যে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে তা দেখতে ভালো লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনে টাকাই সব নয়। এভাবে পরম যত্নে মানুষের খেদমত করতে পেরে আমরা দুজনই খুশি।’

এদিকে মাত্র ২ টাকায় চা-নাশতার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তাদের দোকানে ভিড় করেন। অল্প খরচে চা-নাশতার স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি সবাই বৃদ্ধ দম্পতির আতিথেয়তা দেখতে আসেন।

অধিকারকর্মী কবির হাসান বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এত সস্তায় মানুষকে সেবা দেওয়া মানুষটির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার দোকানের প্রত্যেকটি বেঞ্চ ও টেবিলের খুঁটিগুলো নড়বড়ে। ভাঙা একটি চৌকিতে ঘুমান। শীত, ঝড়-বৃষ্টিতে এভাবেই রাত কাটে তার। অথচ খবর নিলাম সরকারিভাবে কিংবা বিত্তবানদের পক্ষ থেকে তার কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। কোনো দিন সরকারি সহায়তার দশ কেজি চালও তিনি পাননি। অথচ মুখে হাসি নিয়ে অকপটে বলে যান, তার চেয়েও অভাবগ্রস্ত অনেক মানুষ আছেন।’

নূর ইসলামের দোকানে চা পান করতে আসা শিক্ষার্থী রাসেল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র হওয়ায় আমাদের কাছে তেমন টাকা থাকে না। ২ টাকায় চা-নাশতা পাওয়া যাওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে নিয়মিত আসি। আমরা বুঝতে পারি না তিনি কীভাবে এত কম টাকায় বিক্রি করেন।’

সমাজকর্মী মাহাবুব আলম রুবেল বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দোকানটির খবর পাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে চা-দোকানি নূর ইসলামের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সমাজের এমন মানুষগুলোর পাশে যদি দাঁড়ানো যায় তাহলে সত্যিকারের সমাজ গড়া সম্ভব। তার এই মহৎ কাজের জন্য তাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া উচিত।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category