• শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সিলেট-বিয়ানীবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প!

সামিয়ান হাসান / ২৭ Time View
Update : বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

বিয়ানীবাজারের চারখাই-শেওলা-দুবাগ সড়কের দু’পাশে সবুজাভ বৃক্ষের সারি একসময় চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। এই রাস্তার ছায়াঘেরা শীতল বাতাস ও চোখজুড়ানো সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করতো। অথচ সড়কটি প্রশস্তকরণের নামে এর দু’ধারের প্রায় ৩ সহস্রাধিক গাছ সম্প্রতি কেটে ফেলা হয়েছে। সুশিতল ছায়ার পরিবর্তে ওই সড়কে এখন ঠা-ঠা রোদ।

এদিকে বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার পর সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী এই প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য গাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেন প্রকল্পের পরিচালক খান মো: কামরুল আহসান। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে জমি অধি:গ্রহণ কাজও থমকে আছে।

গত বছরের ১লা সেপ্টেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো: আবু সাইদ সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় সিলেট-গোলাপগঞ্জ-চারখাই-জকিগঞ্জ সড়ক (আর-২৫০) এর কদমতলী হতে চারখাই পর্যন্ত এবং শেওলা-চারখাই সড়ক (আর-২৮১) এর চারখাই, শেওলা ব্রীজ হতে দুবাগ পয়েন্ট পর্যন্ত নিলাম বিজ্ঞপ্তি জারী করেন। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩২টি লটে তিন সহস্রাধিক বৃক্ষ কেটে নেয়া হয়। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বীর আহমদ বলেন, এ গাছগুলো বছরের পর বছর পথচারীদের ছায়া দিয়েছে। গাছের ডালে নানান প্রজাতির পাখি কিচিরমিচির করতো। এভাবে নির্বিচার গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শেওলা গ্রামের কলেজ ছাত্র কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাল্যকাল-কিশোরকালের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পথ এবং বৃক্ষরাজি। উন্নয়নের নামে যা কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় আবদুর রশিদ ও হাসান আলী জানান, “এইসব গাছের বয়স ১০-১৫ বছরের কাছাকাছি হবে। কোনো কোনো গাছের বয়স একটু বেশি। গাছগুলো কেটে ফেলায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। তবে সড়ক প্রশস্ত হবে, এলাকার উন্নয়ন হবে-এই ভেবে তখন প্রতিবাদ করিনি।” এত বিপুলসংখ্যক গাছ একসঙ্গে কেটে ফেলার পরও বিয়ানীবাজারবাসীর মনে তেমন আফসোস ছিলনা। প্রত্যাশার উন্নয়নের কারণে কেউই তখন মুখ খোলেননি।

জানা যায়, সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত সহজ করতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেটের চার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেত। জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১ হাজার ৩৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। প্রকল্পে বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় ২৪৭ দশমিক ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৪২ দশমিক ৮০ লাখ ঘনফুট মাটির কাজ, ৪২ দশমিক ৯৮৫ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ১৫৭৫ জন-মাস পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, ৩টি সেতু একটি ফ্লাইওভার, ৬টি ওভারপাস, ২টি আন্ডারপাস, ৪টি ফুটওভার ব্রিজ, ৭টি পথচারী পারাপার, ১টি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সংযুক্ত বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত দ্রুত ও সহজ হত। এ ছাড়া, বিবিআইএন করিডোর, সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর, বিসিআইএম করিডোর, সার্ক করিডোরের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বাড়বে, ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।

সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক খান মো: কামরুল আহসান জানান, প্রকল্প বাতিল করা হয়নি তবে একটু ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category