ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে অপহরণের পাঁচ বছর পর পুলিশের তৎপরতায় বাবা-মায়ের কোলে ফিরেছে সামাউন আলী নামে এক স্কুলছাত্র। সামাউন আলী ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে একনজর দেখতে গ্রামবাসী বালিয়াডাঙ্গী থানায় ভিড় জমায়।
শুক্রবার গভীর রাতে অপহরণকারীরা তাকে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে সেখান থেকে পুলিশ ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্র সামাউন আলী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের গোগবস্তি গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নবম শ্রেণির ছাত্র সামাউন আলীকে (২০) ঢাকায় নিয়ে যান তার চাচাতো ভাই জমিরুল ইসলাম ওরফে মিঠুন। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে একাধিকবার ছেলেকে ফেরত চেয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেন সামাউনের বাবা। এমনকি জমিরুলের কাছে কয়েক দফায় টাকা দেওয়াও হয়। কিন্তু সামাউনকে ফেরত দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও ব্যর্থ হয়ে সাত মাস আগে সামাউনের চাচা আব্দুল খালেক বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও আদালতে জমিরুল ইসলাম ও তার বাবা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানাকে এজাহার হিসেবে রুজু করে স্কুলছাত্রকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিবাকর অধিকারী বলেন, আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করি। পুলিশের তৎপরতায় অপহরণকারীরা ছেলেটিকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার বিকেলে সামাউনকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাকে কিছুটা অসুস্থ মনে হচ্ছে, চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া সামাউন আলী জানান, তাকে নরসিংদী জেলার একটি গুদামে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাকে কাজ করানো হতো, আর বেতন তুলে নিত অন্য কেউ। কিছুদিন এভাবে চলার পর বাইরের জগতের সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সামাউনের বাবা আব্দুস সোবহান বলেন, স্থানীয়ভাবে সালিশ বসিয়ে একাধিকবার ছেলেকে ফেরত চেয়েছিলাম। কিন্তু আসামিরা কোনো কথা শোনেনি। পরে গ্রামের মানুষের পরামর্শে মামলা করি। পুলিশ যখন আসামিদের ধরতে অভিযান চালায়, তখন তারা ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।