• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন

অবশেষে দুঃখপ্রকাশ করে সাকিবের পোস্ট

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৫৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

অবশেষে নীরবতা ভেঙে ক্ষমা চাইলেন সাকিব আল হাসান। ছাত্র আন্দোলনে নীরব থাকা নিয়ে বুধবার (০৯ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দুঃখপ্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে রাজনীতিতে জড়ানো নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। বিলুপ্ত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সংসদ সদস্যের পদ খোয়াতে হয় তাকে।
ছাত্র আন্দোলনে নীরব ভূমিকা পালন করায় সমালোচনার স্বীকার হন সাকিব। ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর দেশে হয়েছে হত্যা মামলাও। দেশে এলে হয়তো গ্রেপ্তারও হতে পারেন তিনি।
সাকিব আল হাসান চেয়েছিলেন ঘরের মাঠে এসে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে। তবে সে জন্য নিরাপত্তা ও নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তাও চাইছিলেন তিনি। বিসিবি ও সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম কোন নিশ্চয়তা না পাওয়ায় ঝুলে ছিল তার বিদায়ী আয়োজন। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহ্বান ছিলো সাকিবের প্রতি। অবশেষে গত জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছেন বিদায়ে সবাইকে পাশে থাকার।
নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করলেন সাকিব
সাকিবের ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা।
আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে।
শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।
এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।
আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।
এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন- আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড়- আমাকে শক্তি যুগিয়েছে।
আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই!
আপনারা জানেন, খুব শিগগিরই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা।
এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদের পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।
আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি– এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক –আমি নই, আপনারা!’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category