কাঁঠালের রাজধানীখ্যাত গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামে বারোমাসি কাঁঠাল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মাহমুদুল হাসান সবুজ নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা। রোপণের চার বছরের মাথায় তার গাছে এখন শোভা পাচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। অসময়ে অধিক দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কৃষি অর্থনীতিতে এর ছোঁয়া লাগবে বলে বলছেন ফল গবেষকরা।
জানা গেছে, বছর চার আগে ভারতের মুর্শিদাবাদে বেড়াতে গিয়েছিলেন সবুজ। সেখানে তার নজরে পড়ে অসময়ে গাছে কাঁঠাল ধরে থাকার বিষয়টি। এরপর ৫টি চারা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসেন তিনি। পরে দেশ থেকে আরও চারা সংগ্রহ করে ৩৩ শতক জমিতে ৫০টি গাছ রোপণ করে পরিচর্যা শুরু করেন সবুজ। তার বাগানে বারি-৬, বারোমাসি পিঙ্ক, কামকট চিনি, সুপার আর্লি ও সুপার গোল্ডের পাঁচটি জাতের কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সব জাত থেকেই সারা বছর কাঁঠাল পাওয়া যায়। কাঁঠালগুলো আঠাবিহীন। রোপণের চার বছর পর প্রথম বছর অর্ধেক গাছে কাঁঠাল এসেছে, প্রতিটি গাছে ২০-৫০টি কাঁঠাল রয়েছে। গত ছয় মাস ধরে তিনি কাঁঠাল বিক্রিও করছেন। প্রতিটি কাঁঠাল বর্তমান বাজারে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন। সবুজকে দেখে বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের কাঁঠাল বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
শুধু কাঁঠাল বাগান করেই ক্ষান্ত হননি সবুজ। তার বাড়ির পাশে আরও সাড়ে চার বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগানও তৈরি করেছেন। যাতে রোপণ করেছেন বারোমাসি জাতের ভিয়েতনামি বেল, থাই লংগান, থাই সাদা জাম, কাটিমন আম, চায়না লিচুসহ বিভিন্ন জাতের ফল গাছ। তার প্রতিটি ফলের গাছই অসময়ে ফল দেওয়ার উপযোগী। সবুজ বলেন, মৌসুমি ফলগুলো বাজারে এলে তেমন দাম পাওয়া যায় না। আর অসময়ে বাজারে যে ফল আসে, এর চাহিদা ও দাম বেশি থাকে। তাই বারোমাসি জাতের ফল গাছগুলো বেছে নিয়েছি। এখন আশা জাগিয়েছে বারোমাসি কাঁঠালগুলো। গত কয়েক মাসে প্রায় লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছি। সব গাছ থেকে সারাবছর কাঁঠাল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ভালো আয়ের আশা করছি।
দীর্ঘদিন ধরে বারোমাসি কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা করছেন আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাকেন্দ্র জামালপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের উঁচু বন্যামুক্ত এলাকাগুলো বারোমাসি কাঁঠাল চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এখন অনেকেই বারোমাসি কাঁঠাল চাষ করছেন। ভারতে বারোমাসি কাঁঠাল সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আমাদের দেশেও বারি-৬ জাতের কাঁঠালের সবজি হিসেবে ব্যবহারের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আর অসময়ে কাঁঠাল পাওয়ায় বাজারেও ভালো চাহিদা ও দাম বেশি থাকে। আমরাও চাচ্ছি বারোমাসি কাঁঠালের চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে। তা হলে কৃষি অর্থনীতিও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।