• সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ন

আলুর চিপস তৈরি করে স্বাবলম্বী যে গ্রাম

ডেস্ক রিপোর্ট / ৩৪ Time View
Update : সোমবার, ৫ মে, ২০২৫

আলুর চিপস তৈরি ও বিক্রি করেই স্বাবলম্বী গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার। তাই গ্রামটি এখন আলুর চিপসের গ্রাম নামেই পরিচিতি পেয়েছে। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের লোকজন এখন আর বলতে পারেন না, ঠিক কবে থেকে তারা এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাবে অনেকেই বলছেন, আগে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছে কিন্তু বাপ-দাদার আমল থেকেই এ কাজ করে আজ তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আলুর চিপস তৈরির কাজ করেন তারা। এ সময় গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। এটি তাদের সারা বছরের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। আলুর চিপস তৈরির মাধ্যমে এসব পরিবারের অভাব দূর হয়েছে। হাতে তৈরি করা আলুর চিপস বা আলুর পাপডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব চিপস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন।

সরেজমিনে শ্রীকৃষ্টপুরসহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম ভদ্রকালি, কেশবপুর, চুকাইবাড়ি চকরঘুনাথ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, আবার কেউ সেদ্ধ আলু ঝুরি-ঝুরি করে গোলাকার করে কাটছেন। এরপর কাটা আলুগুলো তুলসীগঙ্গা নদীর পাড়, বাঁধ, রাস্তা ও পুকুরপাড়ে রোদে শোকাচ্ছেন।

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, তাদের গ্রামে প্রায় ৪০০ পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে ১০-১২টি পরিবার বাদে সবাই আলুর চিপস তৈরি করে। মৌসুমি এ ব্যবসার আয়ে সারা বছর সংসার চলে। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার মণ আলু সেদ্ধ করা হয়। চিপস তৈরি করতে একটু পরিশ্রম হয়। যেসব ব্যবসায়ীর পুঁজি বেশি, তারা বেশি করে আলু কিনে চিপস তৈরি করে সংরক্ষণ করেন। তারাই বেশি লাভবান হন।

তারা আরও জানান, আলুর চিপস তৈরির জন্য এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আলু কিনতে হয়। সরকার যদি ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের স্বল্পসুদে ঋণ দিত, তাহলে তারা আরও উপকৃত হতেন।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের মো. বাবলু মন্ডল বলেন, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপসের কাজে ব্যবহার করা হয়। অন্য জাতের আলু দিয়ে চিপস তৈরি হলেও তেমন স্বাদ মেলে না ও ক্রেতাদের চাহিদাও কম থাকে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতি মণ ক্যাডিনাল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনতে হয়। সেই আলুগুলো সেদ্ধ করার পর গোলাকার করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। পাঁচ মণ ক্যাডিনাল আলুতে এক মণ চিপস তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগে এই আলুর চিপসের ব্যবসা প্রথমে নিয়ে আসছে আমার বাবা মিরাজ মন্ডল। তারপর থেকে আমি ধরে রেখেছি। আমাদের দেখা দেখি সারাপাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনরা এসে আলুর চিপস নিয়ে যান। আবার তারা নিজেরাও ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আলুর চিপস সরবরাহ করেন। আগে আমাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কেটেছে। বাপ-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসা করে আমাদের পরিবারে সচ্ছলতাও এসেছে। পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের মানুষ করার লক্ষ্যে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

একই গ্রামের তিন কন্যাসন্তানের জননী নূর জাহান বেগম বলেন, চিপস ব্যবসায়ীরা আমাদের আলু কিনে দেয়। আগের দিন সেদ্ধ করে পরের দিন পাতলা ভাবে গোলাকার করে আলু কাটে রোদে পাটিতে শুকাতে দিতে দেয়। শুকিয়ে গেলে তা প্যাকেটজাত করে পাইকারদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। এতে তারা যে অর্থ দেয় আমাদের সংসার ভালোই চলে। দিনে ৩ থেকে ৪ মণ আলু সেদ্ধ করে শুকানো যায়। আলুর চিপস বানিয়ে আমি সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজ জমিতে বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরি করেছি। এই ব্যবসা করে তিন মেয়েকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছি।

শ্রীকৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, আলুর চিপস এই এলাকার একটি শিল্প। এই মৌসুমে গ্রামজুড়ে আলুর চিপস তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। পরিবারের সবাই কাজ করেন। এ কারণে দুই মাস বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category