• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

ইমরান আহমদ মন্ত্রিত্ব পেয়েই যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৭৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ
এমনিতে তিনি নিপাট ‘ভদ্রলোক’ হিসেবে পরিচিত। এই ভদ্রলোক ইমেজে আটবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে সাতবার নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার সপ্তমবারে মেলে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব। তবে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তার ভদ্রলোক ইমেজে চিড় ধরে। লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ আসায় রাজনীতির সেই ভদ্রলোক পরিচয়টি এখন আড়াল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন-পরবর্তী পটপরিবর্তনে এখন তাকে বলা হচ্ছে, ‘ভদ্রলোক’ লুটেপুটে বড়লোক!
তিনি সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সদলবলে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ঢাকার বাসার ল্যান্ডফোনে কল করেও কথা বলা যায়নি।
নির্বাচনি এলাকায় তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, সরকারের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইমরান দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, পাকিস্তানে থাকা একটি পরিবারের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। এ অবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর ইমরান আহমদসহ ১০৩ জনের বিরুদ্ধে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে। ট্রাভেল ব্যবসায়ী আলতাব খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় ইমরান আহমদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, সাবেক সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও নিজাম হাজারী, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদসহ ১০৩ জনের সিন্ডিকেট মানব পাচার করে ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
যোগাযোগ করলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, এই মামলার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তদন্ত করছে। দুদক সূত্র জানায়, পতিত সরকারের সাবেক ১৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক ২৩ সংসদ সদস্যসহ মোট ৪১ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ওই ৪১ জনের মধ্যে ইমরান আহমদ একজন।
এদিকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গোয়াইনঘাটের মাতুরতল বাজার এলাকার সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে আনন্দ মিছিলে হামলা ও গুলিতে সুমন মিয়া (২০) নামের এক তরুণ নিহতের ঘটনায় মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদকে। এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী, পুলিশ, বিজিবিসহ ৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২৭ আগস্ট সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন নিহত সুমন মিয়ার বাবা আব্দুন নুর বিলাল। তিনি গোয়াইঘাটের মাতুরতল বাজার এলাকার ফেনাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা।
উত্থান ভোটের রাজনীতিতে
জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ এই তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৯৯১ সালে, বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতির জ্যোতিষীখ্যাত জাতীয় রাজনীতিবিদ নাজিম কামরান চৌধুরী আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপর ৯৬ সালের নির্বাচনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানও এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত এ দুজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুবাদে ইমরান আহমদ আলোচনায় আসেন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের উপনির্বাচন, ২০০৮ সালের নবম সংসদ, ২০১৪ সালের দশম সংসদ, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ এবং সর্বশেষ বাতিল হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদের মন্ত্রিপরিষদে ইমরান আহমদ প্রথমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তী সময়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বিগত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি আর মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই পাননি। মন্ত্রী থাকাকালে প্রায় পাঁচ বছর তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত লুটপাটের অভিযোগ থাকায় তাকে আর মন্ত্রী করা হয়নি বলে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে। তার নির্বাচনি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, রাজনীতিতে তার ভদ্রলোক পরিচয়ে তখন থেকে চিড় ধরে।
সম্পদ বেড়েছে ৬৮ গুণেরও বেশি
ইমরান আহমদ পারিবারিকভাবে ধনী। বাবার আমলে দুটি চা-বাগানের মালিকানাসহ পাকিস্তানেও পারিবারিক সম্পত্তি রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সম্পদ বিবরণীসংক্রান্ত হলফনামা নির্বাচন কমিশনে দাখিলের বাধ্যবাধকতা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। চারটি হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, তার দেওয়া সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী গত ১৪ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৬৮ গুণেরও বেশি।
২০০৯ সালের হলফনামায় তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল যেখানে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, সেখানে ঠিক ১৪ বছর পর ২০২৩ সালে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৯ টাকা। বেড়েছে স্থাবর সম্পদের পরিমাণও।
হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৯ সালে তার স্থাবর সম্পদ ছিল নিজের নামে ৪ দশমিক ৫০ একর কৃষিজমি, যার দাম ৫৫ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৪২ হাজার ৩৮২ টাকা। আর স্থাবর সম্পদ হিসেবে আগের সাড়ে চার একর কৃষিজমি ছাড়াও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে শ্রীপুর চা-বাগানের মালিক। কিন্তু এর আগের ২০০৯ সালের হলফনামায় চা-বাগানের মালিকানার তথ্য উল্লেখ করেননি।
২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৯৭ টাকা এবং পরের নির্বাচন অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৯ টাকা।
২০০৯ সালের হলফনামায় গাড়ির কোনো তথ্য দেননি। এর পরের বারের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন তার একটি পাজেরো জিপ আছে, যার দাম ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার একটি টয়োটা প্রাডো গাড়ি আছে। গাড়িটির দাম ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ দেওয়া হলফনামায়ও প্রাডো গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন, যার দাম ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৫ টাকা। তিনবার পৃথক পৃথক গাড়ির তথ্য দেওয়া হলেও এগুলো শুল্কবিহীন সংসদ সদস্য কোটায় আমদানি করা হয়েছে না বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে কেনা- এসবের কোনো তথ্য নেই।
সিলেট জেলার ১৮টি চা-বাগানের একটি জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর চা-বাগান। ভূমি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা-গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী বাগানটি ১৯৭২ সালের ১৫ আগস্ট ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। ইজারার মেয়াদ পেরিয়েছে ২০০৭ সালের ১৪ আগস্ট। বর্তমানে ইজারাবিহীন এই চা-বাগানটির মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৭ একর। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ইমরান আহমদ তার হলফনামার সম্পদ বিবরণীর তথ্যে শ্রীপুর চা-বাগানটির একাংশের মালিক হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেছেন।
তাতে বলা হয়েছে, ‘আমি উত্তরাধিকার সূত্রে শ্রীপুর চা-বাগানের ২/১৩ অংশের মালিক। বাকি ১১/১৩ অংশের মালিক সরকার। ২০১২ সালের ১৮ জুন সরকারের সঙ্গে আমার লিজ চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছে।’
এ নিয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর খবরের কাগজে ‘মন্ত্রী ইমরানের চা-বাগানের ইজারা মেয়াদোত্তীর্ণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। পেশায় চা ব্যবসায়ী ও পরামর্শক ইমরান তার হলফনামায় পেশা থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে প্রাপ্ত আয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৭৫ টাকা।
শ্রীপুর চা-বাগানের ২/১৩ অংশের মালিক উল্লেখ করলেও বাগানটির অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ না করে উত্তরাধিকার সূত্রে শ্রীপুর চা-বাগানের ২/১৩ অংশের মালিকানার বিষয়টি রয়েছে। সরকারি তথ্যে বাগানটির ইজারা মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রীর হলফনামায় ইজারা বন্দোবস্ত নেওয়ার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
লুটপাটের সঙ্গী-সাথিরা
ইমরান মন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গীরা তিন উপজেলায় ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ছিল তার নির্ধারিত লোক। গোয়াইনঘাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (বর্তমানে পদত্যাগ) ফজলুল হক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (অপসারিত) লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ‘মন্ত্রীর লোক’ পরিচয়ে চলত ক্ষমতার দাপটে প্রভাব বিস্তার। তাদের দাপটে স্থানীয় প্রশাসনও অসহায় ছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জৈন্তাপুরে লিয়াকত আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ শ্রীপুর পাথর কোয়ারি ও তামাবিল স্থলবন্দর নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত জাফলংয়ে পাথর ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন অধ্যক্ষ ফজলুল হক ও তার ভাই শামছুল হক এবং তাদের জামাতা ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন এবং সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুবাস দাস। গোয়াইনঘাটে চোরাই চিনিসহ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতেন লেংগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওরফে উফাসি মুজিব, নন্দিরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হাসান। কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত এলাকার চোরাচালান ও পাথর কোয়ারি নিয়ন্ত্রণ করতেন সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য আপ্তাব আলী কালা মিয়া ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য তামান্না আক্তার হেনা।
অভিযোগ রয়েছে, ইমরান এমপি-মন্ত্রীর দাপটে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, জাফলং পাথর কোয়ারি, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি ও বিভিন্ন বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন থেকে বছরে শতকোটি টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা হতো। জাফলং ইসিএ ঘোষণার পর পাথর ও বালুমহাল ইজারা কার্যক্রম ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ থাকলেও মন্ত্রীর লোক পরিচয়ে বালু-পাথর আহরণ চলত। শ্রীপুরে চা-বাগানের মালিকানা দেখিয়ে সেখান থেকে একটানা পাঁচ বছর বোল্ডার পাথর আহরণ হয়েছে। ইমরান মন্ত্রী থাকার পাঁচ বছরে তিন উপজেলার পাথর ও বালুমহাল থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে। এসব লুটপাটে ইমরানের সঙ্গী-সাথিরাও রাতারাতি ধনী হয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পরই সিলেট-৪ নির্বাচনি এলাকায় আরেক চিত্র দেখা গেছে। ওই দিন বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিজয় মিছিলের নামে লুটপাট হয়েছে ক্ষমতার দাপট খাটানো সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের ঘনিষ্ঠদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। ভাঙচুর ও লুটপাটের এসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই। তবে জাফলং ইসিএ এরিয়ার পাথর লুটের চিত্র রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে। সম্প্রতি সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো একটি স্মারকপত্রে (নম্বর: ০৫.৪৬.৯১৪১.০০০.৩১.০০৩.১৯-৭৩৮) বলা হয়, কতিপয় দুষ্কৃতকারী এক কোটি ঘনফুট পাথর লুট করেছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের জরিপে জাফলং-ডাউকি-পিয়াইন নদের সংযোগস্থল জিরো পয়েন্টে প্রাকৃতিকভাবে পাথর জমা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫১২ ঘনফুট পাথর মজুত ছিল। যোগাযোগ করলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিন জাফলং গিয়ে দেখা গেছে, ইসিএ এরিয়ার পাথর লুটের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি সাবেক ক্ষমতাসীনদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতেও লুটপাট হয়েছে একই আক্রোশে। এই সংখ্যা শতাধিক হবে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ইমরানের ঘনিষ্ঠজন কেউ আর এলাকায় নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশও পাড়ি দিয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে একজনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়। তিনি সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুবাস দাস।
সুবাস দাসের দাবি, তারা ক্ষমতার দাপটে লুটপাট নয়, রাজনীতি ও ব্যবসা করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে।
গত সোমবার রাতে সুবাস দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজনীতি বা ব্যবসা-বাণিজ্য করা অপরাধ নয়। আমরা ব্যবসা করেছি, সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছি। একইভাবে আমরা আমাদের রাজনৈতিক কারণে স্থানীয় এমপি হিসেবে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছাকাছি থাকায় আক্রোশের শিকার হয়েছি। এর মধ্যে আমি যখন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই, ঠিক তখনই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে স্থানীয় একটি চক্র। মামলা দিয়ে তা প্রত্যাহার করতে আবার মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার আমরা।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category