৫১ শতাংশ সরকারি মালিকাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি চা বাগানের এক সময় জৌলুশ ছিল। প্রথম শ্রেণির বাগান হিসেবে মর্যাদা ছিল। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসানে থাকায় ১২টি চা বাগান গত তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বাগান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দরিদ্র চা-শ্রমিকরা। কারণ কাজের ওপর তাদের জীবিকা নির্ভরশীল। কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে এখন তারা কঠিন বিপদের মধ্যে পড়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক নেতা ও শ্রম অধিদপ্তর ত্রি-পাক্ষিক সভা করে কিছু দিন আগে। সিদ্ধান্ত হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ধাপে ধাপে পরিশোধ করবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মজুরি পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ সংবাদ শুনার পর শ্রমিকরা আরও হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ, কাজ করলেই তারা মজুরি ও রেশন পান। তা দিয়ে কোনোরকম জীবন চলাতে পারেন। বাগান বন্ধ থাকার কারণে শুধু শ্রমিকদেরই ক্ষতি হয়নি। তিন মাস চা-পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় বাগানের লোকসান আরও বাড়বে। তাছাড়া দীর্ঘদিন বাগান বন্ধ থাকায় কারখানার অনেক যন্ত্রপাতি এখন নষ্ট হতে চলেছে।
বাগানের অচলাবস্থা নিয়ে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের সাধারণ শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা জানান, শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা মাত্র ১৭৮ টাকা এবং সপ্তাহে পান সাড়ে ৩ কেজি আটা। এরপরও বছরের পর বছর তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ চা-শ্রমিকরা বংশপরম্পরায় এ কাজ করে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে হাজারও নারী শ্রমিক বাগানের কাজে খুবই দক্ষ।
তারা বাগানের কাজকে খুব ভালোবাসেন। তাদের অভিযোগ, সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারায় আজ সাধারণ শ্রমিকদের খেসারত দিতে হচ্ছে।
শ্রমিক নেতা খোকন পান তাতি বলেন, বাগান পরিচালনায় যেখানে সমস্যা রয়েছে সেগুলো আগে সমাধান করতে হবে। তা না হলে বারবার সংকটে পড়ে বাগান চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিগত সময়ে যারা বাগান পরিচালনা করতে গিয়ে অনিয়ম করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। কারণ সাধারণ শ্রমিকদের রুটিরুজি নিয়ে যারা তালবাহানা করে তাদের ছাড় দেওয়া ঠিক নয়।
এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, এনটিসির ১২ বাগানে সুদিন ফিরিয়ে সবদিক বুঝেশুনে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছি। যাতে বাগান ও বাগানের মানুষ ভালো থাকে। এনটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, চা-বাগানে সংকট দেখা দেয় ২০১৯ সাল থেকে। মহামারি কোভিডের সময় দেশের সবকটি চা বাগানকে লোকসান গুনতে হয়েছে। এরপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, শ্রমিকের মজুরি, হাসপাতাল খরচ, সার, কীটনাশক , জ্বালানি, পরিবহন খরচসহ চা বাগানের সাথে সম্পৃক্ত সব জিনিষপত্রের দাম বেড়ে উৎপাদ খরচ বেড়ে গেছে। এক কেজি চা উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৩০০ টাকার কাছাকাছি কিন্তু সারা বছরে গড় দাম মিলে ১৩০ টাকার মতো। বাগানে উৎপাদিত চা পাতা বাজারজাতকরণে রয়েছে জঠিলতা। আগের নিয়মের কাছে বাগান মালিকরা বন্ধি। বাগানের চা পাতা চট্রগামে ও সিলেটের নিলাম বাজারে বিক্রি করতে হয়। বেশিরভাগ চা পাতা চট্টগ্রাম নিলাম বাজারে বিক্রি করতে হয়। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চায়ের বাজার আটকে আছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে কম দামে চা বিক্রি করে দিতে হয়।