• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৪ অপরাহ্ন

খাবার টেবিলে ভ্যাটের খড়গ, রেস্তোরাঁয় গিয়ে কাস্টমারদের বাড়তি ঝগড়াঝাটি!

ডেস্ক রিপোর্ট / ৭৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫

রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ৫ শতাংশ ভ্যাট থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১৫ শতাংশ করা যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না ভোক্তারা। এ নিয়ে রেস্তোরাঁগুলোতে ভোক্তাদের সঙ্গে কর্মীদের নিয়মিতই তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটছে।

একদিকে গ্রাহকরা বলছেন, ভ্যাট বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের কোনও যৌক্তিকতা নেই। অন্যদিকে, রেস্তোরাঁর কর্মীরাও ‘সরকারের নিয়ম’ বোঝাতে গিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। ভ্যাট বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রেস্তোরাঁর টেবিলে খাবারের চেয়ে অভিযোগের শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে। এতে রেস্তোরাঁর পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠছে। তবে তুলনামূলক নামি-দামি রেস্তোরাঁগুলোতে অসন্তোষ থাকলেও খুব একটা অভিযোগ নেই ভোক্তাদের।

গত ৯ জানুয়ারি রাতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ। এ তথ্য অনেক ক্রেতা জানা না থাকার কারণে রেস্টুরেন্টের কর্মীদের সঙ্গে বাঁধছে তর্ক-বিতর্ক। ক্রেতারা এই অতিরিক্ত ভ্যাটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হচ্ছেন না।

সম্প্রতি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে নতুন করে ভ্যাটের চাপ দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

মিরপুরের একটি এসি থাকা রেস্টুরেন্টে খেতে আসা ফাহমিদুল ইসলাম বলেন, ‘অল্প সময়ের জন্য পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে আশপাশে কোথাও বের হলে রেস্টুরেন্টেই আসা হয়। এখন তো আর আগের মতো না যে, কোনও উৎসব ছাড়া রেস্টুরেন্টে যাওয়া হয় না। এটি এখন আমাদের জীবনের একটি নিয়মিত অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন এই অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে সেটা ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

মিরপুরের একটি ফুড কোর্টে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে খেতে এসেছেন তরুণী তাসফিয়া রূপা। তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের দাম এমনিতেই আগের তুলনায় বেড়েছে। তার সঙ্গে ভ্যাটের এই অতিরিক্ত বোঝা বহন করা কঠিন হয়ে যাবে।’

রেস্টুরেন্টে আসা অনেক ভোক্তার মতে শহরে বিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থার অভাবের কারণে মানুষ রেস্তোরাঁমুখী হয়। রেস্তোরাঁ শুধু খাবার পরিবেশনের জায়গা নয়, এটি এখন অনেকের জন্য বিনোদনের একটি মাধ্যম। কিন্তু ভ্যাট বৃদ্ধি মানুষকে সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করতে পারে।

পান্থপথে এক রেস্টুরেন্টে আসা ক্রেতা যুথি ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে পার্ক বা খোলা জায়গার অভাবের কারণে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য রেস্টুরেন্টে যাই। এখন ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে সেখানে যাওয়ার আগেও ভাবতে হবে।’

ফার্মগেটের আরেক ভোক্তা আশফাক আহমেদ বলেন, ‘এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ওপর অতিরিক্ত ভ্যাটের চাপ আরেকটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার নিয়ে বাইরে খেতে যাওয়াও এখন বিলাসিতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।’

রেস্তোরাঁ মালিকদের উদ্বেগ

ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে রেস্তোরাঁ মালিকরাও বিক্রি কমে যাওয়ারয় আশঙ্কা করছেন। ভ্যাট বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। রেস্তোরাঁ মালিকদের ভাষ্য, ইতোমধ্যেই রেস্তোরাঁর পরিচালন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। রান্নার উপকরণের দাম, কর্মীদের বেতন—সবকিছুই বাড়তি। এখন নতুন করে ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে গ্রাহকরা রেস্তোরাঁয় আসা কমিয়ে দিতে পারেন, যা ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর।

এদিকে ভ্যাট বৃদ্ধির খবরে গত ৯ তারিখেই সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সেখানে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘রেস্তোরাঁ ব্যবসার ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নামে আরও একটি ১০ শতাংশ কর আগে থেকেই আছে। অর্থাৎ ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ১০ শতাংশ যোগ করা হলে ভোক্তাদের মোট ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। গুলশান ও বনানীর মানুষেরা এই ভ্যাট দিতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা দেওয়া সম্ভব নয়, বিষয়টি অবাস্তব। পৃথিবীর কোথাও খাবারে এত ভ্যাট নেই।’

এসময় ভ্যাট আগের মতো ৫ শতাংশ না রাখা হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category