• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

গাছের ভেতর অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদের অবস্থান বাংলাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট / ২৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদ। এটি বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নের চরহোগলা গ্রামে অবস্থিত। চোখজুড়ানো স্থাপত্য কিংবা পোড়ামাটির কারুকাজ, কোনোটিই নেই এ মসজিদের। এর বিশেষত্ব হচ্ছে আকার। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মসজিদ বলে দাবি স্থানীয়দের। মসজিদ জড়িয়ে রাখা একটি গাছ ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি।

মসজিদটি আকারে এতটাই ছোট যে, তিন থেকে চারজনের বেশি মামুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন না। তিন ফুটের একটি দরজা এবং উত্তর-দক্ষিণে পৃথক দুটি জানালা। রয়েছে একটি গম্বুজ। মসজিদের মিম্বর না থাকলেও দেয়াল কেটে আকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভেতরের উচ্চতা সাড়ে ১২ ফুট। ৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫ ফুট প্রস্তের এ মসজিদটি ঠিক কবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই কারোর।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, পর্তুগিজ আমলে নির্মিত এ মসজিদটি। পুরোনো দলিলের রেকর্ডপত্রে আব্দুল মজিদ সিকদার ও বন্দে আলি সিকদার নামে দুই ব্যক্তির নাম খতিয়ানে পাওয়া যায়। সেখানে ২১ শতাংশ জমি মসজিদের নামে জনসাধারণের ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। আর মসজিদের পরিচিতি অনুযায়ী স্থানটি মসজিদ বাড়ি হিসেবে পরিচিত। তবে ঠিক কত সালে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, গাজী কালু দরগাবাড়ির পাঞ্জেগানা মসজিদ, গায়েবি মসজিদ আবার কানা মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটি একটি বৃহদাকার ‘লাহর’ গাছের শিকর-বাকড়ে আবৃত। ‘লাহর’ গাছটি মসজিদকে এমনভাবে জড়িয়ে রেখেছে, বাইরে থেকে প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো মসজিদ রয়েছে। সম্পূর্ণ পোড়ামাটি আর চুন-সুড়কি দিয়ে নির্মাণ এ মসজিদটি।

মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ বাদল সিকদার বলেন, মসজিদটি পর্তুগিজ আমলের নির্দশন। শুধু এটি নয়, পতাং ও নাপিতেরর হাট নামক দুটি স্থানে এমন ছোট আরও দুটি মসজিদ ছিল। সেগুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মসজিদটি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা ‘লাহর’ গাছটি নিয়ে নানা অলৌকিক গল্পের কথা জানিয়েছেন মোতাহার হোসেন চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, মসজিদটিকে অসম্মান করা বা এর মানতের টাকা বেহাত যারা করেছেন, তাদের অনেকের অকাল মৃত্যু আমি দেখেছি। মসজিদটি রক্ষাকারী বিরল প্রজাতির গাছটিও কিংবদন্তির অংশ হয়ে উঠেছে। তাই গাছের ডাল ভাঙা তো দূরের কথা, ভুলক্রমে একটি পাতাও ছেঁড়েন না কেউ। এমনকি গাছ থেকে ঝরে পড়া পাতা নিচেই পড়ে থাকছে। জ্বালানি হিসেবেও কেউ ব্যবহার করেন না। কেউ যদি এ গাছের ডাল ভাঙেন, কিংবা পাতা ছেঁড়েন তবে তার বিপদ নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করেন গ্রামবাসী।

মসজিদবাড়ির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সেলিম বলেন, একবার এক মুরব্বি মসজিদের গাছটির পাতা ছিঁড়েছিলেন। সেদিন থেকেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের পূর্বপুরুষরা শুনে এসেছেন মসজিদ গাছটির পাতা ছেঁড়া, অসম্মান করা বা ডাল কাটলে ক্ষতি হয়। আমরাও সেই বিশ্বাস ধারণ করি। এ গাছটির পাতা যেখানে পড়ে, সেখানেই মজে পচ যায়, কেউ ধরেন না। গাছটির শিকড়, ডালপালা বিভিন্ন দিকে নেমে গেছে, আমরা ওসব কিছুই ধরি না।

তিনি আরও বলেন, অনেক লোক আসেন এখানে মনের আসা পূরণে মানত করে। মূলত তাদের টাকায় মসজিদটির উন্নয়ন করা হয়। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না হলেও যারা মানত করেন, তারা নামাজ পড়েন এখানে। তিনি দাবি করে বলেন, আমার মনে হয় বিশ্বের ছোট মসজিদ এটি। গিনেস বুকে এ মসজিদের নাম ওঠানোর দাবি জানাচ্ছি।

মসজিদবাড়ির বাসিন্দা সোহাগ সিকদার জানান, এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত জামাত হয় না। তবে বাড়ির এবং দূরদূরন্ত থেকে আসা মানুষরা এখানে মানত করে নামাজ আদায় করেন। আবার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে মানতও করেন অনেকে। মানতের টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিল, মাহফিল এবং খিচুড়ির আয়োজন করা হয়।

সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলেও স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, গায়েবিভাবেই তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট এই মসজিদটি। অনেকে আবার এ-ও দাবি করেন, রাতে এ মসজিদে সাদা কাপড় পরিহিত অস্বাভাবিক আকৃতির লোকদের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছা। বিশেষ করে অমাবস্যার রাতে ঘটে অলৌকিক ঘটনা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category