নকশা জটিলতায় থমকে আছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ। তবে কার্গো হাউস নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় পুরোদমে শুরু হয়েছে কার্গো পরিবহন। এ বিমানবন্দর দিয়ে গত বুধবার পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইটে ১৮০ টন গার্মেন্ট পণ্য সরাসরি রপ্তানি করা হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে প্যাকেজিং হাউস না থাকায় এখনও বিমানবন্দরটির সুবিধা নিতে পারছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বা সিলেট অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকার পরও আকাশপথে পণ্য পরিবহনে ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হতো ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করা হতো। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল ভারত এ সুবিধা বাতিল করে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২৭ এপ্রিল সিলেট বিমানবন্দর থেকে ৬৬ টন পণ্য নিয়ে ছেড়ে যায় প্রথম কার্গো ফ্লাইট।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের তুলনায় সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইটে পণ? পরিবহনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম খরচ হচ্ছে। সিলেটে প্রথম কার্গো ফ্লাইট চালুর দিন এমন তথ্য জানিয়েছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, সিলেটের স্থানীয় কৃষিপণ্য রপ্তানির সীমাবদ্ধ দূর করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে ওয়্যারহাউস স্থাপনের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।
সিলেট থেকে রপ্তানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০২০ সালে ওসমানী বিমানবন্দরে শুরু হয় এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ। প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে ১০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন উন্নতমানের কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, দ্রুত পণ্য রপ্তানির জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পুরো প্রস্তুত করা হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য সরাসরি ইউরোপে যাচ্ছে।
পণ্য পরিবহনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ওসমানী বিমানবন্দর- জানিয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ জানান, গত বুধবার পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইটে ১৮০ টন পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। সবই গার্মেন্টস পণ্য। এদিকে রপ্তানি বাণিজ্যে ওসমানী বিমানবন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও তার পুরো সুবিধা নিতে পারছেন না সিলেটের ব্যবসায়ীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ার পরও বিদেশ যায়নি সিলেটের কোনো পণ্য।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে সাইট্রাস জাতীয় ফল রপ্তানি করেন সিলেটের ব্যবসায়ী হিজকিল গুলজার। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সিলেটের কৃষিপণ্যের বিপুল বাজার রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু
বিমানবন্দরে কার্গো হাউস এখন পর্যন্ত সিলেটের ব্যবসায়ীদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ রপ্তানির জন্য কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে প্যাকেজ করতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের নারায়ণগঞ্জের শ্যামনগর ওয়্যারহাউসে যেতে হয়। সিলেটে প্যাকেজিং হাউস স্থাপনের কথা বার বার বলা হলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বিশাল অংশ সিলেটি হওয়ায় সেখানকার বাজারে সিলেটের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিলেটের শাকসবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, পান, ফ্রোজেন ফিশ, নানা জাতের সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা ও কুঠির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সরাসরি বহির্বিশ্বে পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি ও খরচ বেশি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তবে সিলেটের রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ কৃষিপণ্য হওয়ায় এর সুবিধা নিতে পারছে না সিলেটের ব্যবসায়ীরা।