• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

টেন্ডার নিয়ে বিএনপি নেতার তুলকালাম, তত্ত্বাবধায়ক লাঞ্ছিত

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৩০ Time View
Update : শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) টেন্ডার নিয়ে বিএনপির এক নেতার উপস্থিতিতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজ মোবাইল ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত শরফুদ্দৌলা ছোটলু ‘এ কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তবে তার প্রতিষ্ঠান ওই কাজের দরপত্রে অংশ না নিলেও তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান তাতে অংশ নেয় বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) জন্য ছয়টি গ্রুপে প্রায় ৫ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠানও তাতে অংশ নেয়। তবে সেই প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সব পায়নি। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের তিনি তত্ত্বাবধায়কের লাঞ্ছিতের নির্দেশ দেন।

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা ও উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলু তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে তার কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপির কর্মী হাবিবুল্লাহ। তিনি প্রবেশ করেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন। এর মধ্যেই ছোটলুর নেতৃত্বে আরও ৭-৮ জন সেই কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ছোটলু হাবিবুল্লাহকে তত্ত্বাবধায়কের চেয়ার থেকে তাকে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। এরপর হাবিবুল্লাহ ও তত্ত্বাবধায়কের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের অন্য স্টাফরা এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বলেন, ‘ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যান। এ সময় বিএনপি নেতা ছোটলুর নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তিনি আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে তারা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছোটলু সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক। সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেয়। তারা সবকয়টি কাজ না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরে তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমার চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে। তখনই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি পরবর্তীতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন, সেটা গ্রহণ করা হবে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা ছোটলুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তিনি র‍্যালিতে রয়েছেন। হাসপাতালে কী ঘটেছে, না ঘটেছে এখন বলা যাচ্ছে না—বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা আছে; তবে তিনি হাসপাতালে কোনো টেন্ডার জমা দেননি। ওই তত্ত্বাবধায়কের কাছে তার একটি কাজ ছিল, সেই কাজে তিনি গিয়েছিলেন। হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। তাই নিয়ে তাদের দুজনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। তিনি শুধু ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category