টানা কয়েক দিনে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হচ্ছে ভাঙন। দুই জেলায় গত দুই দিনে অন্তত ১২০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে কয়েক শ ঘরবাড়ি, স্কুল ও আশ্রয়ণকেন্দ্র। ভাঙন আতঙ্কে আছে পাঁচ শতাধিক পরিবার।
লালমনিরহাট: গত রবিবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করে। রাতেই প্লাবিত অনেক অঞ্চল থেকে পানি নেমে যায়। তবে কিছু নিচু অঞ্চল ও চরাঞ্চলের বহু বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট সোমবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) ডুবেছিল।
এদিকে পানি হঠাৎ কমে যাওয়ায় জেলার কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া, গরিবুল্লাপাড়া, সদরের খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। গত দুই দিনে এসব এলাকায় ৫০টির বেশি বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া এসব পয়েন্টে কমপক্ষে ৫০০ পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানি আরও কমলে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই দিন এই ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি ডুবেছিল। পানি কমতে শুরু করেছে।
ডালিয়া পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে তিস্তায় পানিপ্রবাহ বেড়েছিল। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। জরুরি বরাদ্দ পেলেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব উদ্দীন বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ টন জিআর চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে ধরলা ও তিস্তা নদীর তীরে। রাজার হাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, বুড়িরহাটে ১০টির বেশি বাড়ি বিলীন হয়েছে।
গতিয়াসাম এলাকার আবদুস সোবহান বলেন, ‘পানিতে সব তলিয়ে গেছিল। পানি নামল আর ভাঙন বাড়ল। পানি বাড়ার সময়ও চারটি বাড়ি ভেঙে গেছে। হুমকিতে আছে আরও শতাধিক বাড়িঘর।’
এদিকে গত দুই দিনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আক্কেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক, কুদের কুটি কাশেম বাজার জামে মসজিদ, ৬০টি বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া খুদেরকুটি আব্দুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে দিন-রাত গাছের ডাল ও বস্তা ফেলে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ভাঙনকবলিত মানুষ।
ভাঙনকবলিত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আকতার হোসেন, মোক্তার হোসেন, মহুবর রহমান, ইব্রাহীম আলী বলেন, ‘আমাদের বসতবাড়ি ও জমাজমি নদীর পেটে গেছে। ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’
বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ধরলার ভাঙনে আমার বাড়িসহ ৬০টি বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক বিলীন হয়ে গেছে। অনেক স্কুল ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।’
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আক্কেল মামুদ কমিউনিটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপকরণসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে লোক পাঠানো হয়েছে। ভাঙন রোধে ১ হাজার ৫০০ জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।