নারীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্কুলব্যাগ, ডলব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, শপিংব্যাগ, টিফিন ক্যারিয়ার ব্যাগ, লন্ড্রি ব্যাগ, নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগসহ নানা ধরনের পণ্য। আর এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরিকৃত এসব পাটজাত পণ্য ইতোমধ্যে বিদেশিদের নজর কেড়েছে। ফলে গত অর্থবছর এসব পণ্য রপ্তানি করে সাড়ে ৪ কোটি টাকা আয় করা হয়। আর এবারে ৫ কোটি টাকার টার্গেট নির্ধারণ করে নিরলসভাবে কাজ করছেন ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী উদ্যোক্তারা।
জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে কানাডা ও ইউএসএভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ম্যানোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির (এমসিসি) অধীনে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চটের ব্যাগ ও কার্ড তৈরির কাজ শুরু করেন সৈয়দপুর শহরের অসহায় নারীরা। তারা ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের শুধু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মজুরি পেতেন। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। পরে ১৯৯৫ সালে তারা সবাই মিলে সঞ্চয়ের টাকায় গড়ে তোলেন সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ নামে এ সংস্থাটি। শহরের গোলাহাট এলাকায় ১৬ শতক জমিতে ছয়তলার ভিত্তি দিয়ে পাঁচতলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে দেড় শতাধিক নারী উদ্যোক্তা নিরলসভাবে তৈরি করছেন চটের রকমারি ব্যাগ। তবে ভারী কাজের জন্য স্বল্পসংখ্যক পুরুষ শ্রমিকও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার রাশেদ আহমেদ বলেন, এসব পণ্য আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ডেনমার্ক, কোরিয়া, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এখানে কাজ করে নারীরা সংসারে অভাব-অনটন দূর করে এনেছেন সচ্ছলতা। হিসাব বিভাগের ম্যানেজার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, গত অর্থবছরে তারা সাড়ে ৪ কোটি টাকা আয় করেছেন। এবারে ৫ কোটি টাকার টার্গেট ধরে কাজ করা হচ্ছে। শহরের সাহেবপাড়ার আমিন মোড় এলাকার নাছিমা খাতুন, নতুন বাবুপাড়ার ফাতেমা বেগম ও শিল্পী রাণী কাজ করেন এ ব্যাগ তৈরির কারখানায়। তারা বলেন, তাদের সংসারে অভাব-অনটন বলে বর্তমানে কিছু নেই। ওই আয়ের টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের অন্যান্য চাহিদাও পূরণ করা হচ্ছে।
সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক মাসুম ইবনুল হক খান বলেন, এখানে যারা কাজ করেন, তারা সবাই নারী উদ্যোক্তা। এখানকার সব পণ্য বিদেশি ক্রেতাদের দেওয়া চাহিদা ও ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি করা হয়। এদিকে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে সরকারের সহযোগিতায় কানাডায় অনুষ্ঠিত পাটপণ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ভিন্ন দেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাটপণ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে সম্মাননা স্মারক লাভ করে সৈয়দপুর এন্টারপ্রাইজ।