• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

নিজের তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড়লেন জুলহাস

ডেস্ক রিপোর্ট / ২৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫

চার বছরের চেষ্টায় নিজের তৈরি আরসি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জুলহাস মোল্লা।

মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার চরে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় উৎসুক জনতার সামনে জুলহাস তার নিজের হাতে তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

জুলহাস মোল্লা জানান, তার বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রাম। সেখানে ২০১৪ সালে জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। অর্থাভাবে আর পড়ালেখা হয়নি। নদী ভাঙনের কারণে ঘর হারিয়ে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে তাদের বসবাস। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে ঢাকায় কাজ করেন।

তিনি জানান, গত চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোলার বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পরে আল্ট্রালাইট বিমান তৈরির কথা মাথায় আসে। কিন্তু সেটা তৈরি করে তেমন সাফল্য আসেনি। পরে গত এক বছর চেষ্টা করে এই বিমানটি তৈরি করতে সক্ষম হন। টাকার যোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, আর অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে মূলত বিমানটি তৈরি করা হয়। বিমানটির ওজন হয়েছে একশত কেজি। গতি পরিমাপের জন্য লাগানো হয়েছে একটি ডিজিটাল মিটার, পাখা তৈরি করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। ইঞ্জিন চলে অকটেন অথবা পেট্রল দিয়ে।

জুলহাস মোল্লা জানান, উড়োজাহাজটির ঘণ্টায় গতি সর্ব্বোচ ৭০ কিলোমিটার। গত কয়েকদিন আগে উড়োজাহাজটি সফল ভাবে আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয়। আমি জীবনে কোনোদিন উড়োজাহাজে উঠিনি। এখন নিজের তৈরি উড়োজাহাজ দিয়ে আকাশে উড়ে স্বপ্নও পূরণ করেছি।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে পরিবার ও এলাকাবাসী পাগল মনে করেছেন। তবে এখন সবাই উৎসাহ আর বাহাবা দিচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে এ নিয়ে কাজ করে যাওয়ার আগ্রহ দেখান তিনি।

জুলহাস দাবি করে বলেন, আমার আগে কেউ বাংলাদেশে নিজে বিমান তৈরি করে আকাশে উড়তে পারেনি। তবে অনেকেই চেষ্টা করেছিল।

জুলহাসের ছোটভাই নয়ন মোল্লা জানান, শুরু থেকেই আমি ভাইয়ে সঙ্গে ছিলাম। সব কাজ আমি সাথে থেকে করেছি। আমরা কোনো সময় দমে যাইনি। গত এক বছর দিনে আমরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিমান তৈরি করতে গবেষণা ও কাজ চালিয়ে গেছি।

জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা বলেন জুলহাস ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের জিনিস নিয়ে ঘাটাঘাটি করত। পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলত, ‘দেখবে আমি এমন একটা জিনিস বানাবো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবো।’ আজ ছেলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ছেলের তৈরি বিমান আজ আকাশে উড়েছে। এখন সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তবেই জুলহাসের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।

জাফরগঞ্জ এলাকায় গৃহবধূ রুখসানা বলেন সামনে থেকে কখনো উড়োজাহাজ দেখিনি। এলাকার ছেলে উড়োজাহাজ তৈরি করেছে তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড়ছে।

তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, জুলহাসকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। এখন সরকারিভাবে ওর প্রশিক্ষণ ও সহায়তার প্রয়োজন। তিন থেকে চার মিনিট জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড্ডয়ন করে আবার নেমে আসে। আজ বেশি বাতাস থাকায় ঝুঁকি এড়াতে আর বেশিক্ষণ বিমানটি আকাশে উড়ানো যায়নি।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সংবাদ পেয়েই আজ জুলহাসের উড়োজাহাজ দেখতে এসেছি। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জুলহাসকে প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়ে চেষ্টা করব। সত্যিই প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছেলের এমন আবিষ্কার সবাইকে মুগ্ধ করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category