সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি শেষ করে সিলেট থেকে সনদ নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন পাভেল আহমেদ কামরুল (২৪)। পরিবারকে সহায়তা করতে কাজ নিয়েছিলেন সিলেট নগরীর কাজীরবাজারের একটি দোকানে। ৫ আগস্ট নগরীর ক্বীনব্রিজ এলাকায় বুকে ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
কামরুল শুরু থেকেই আন্দোলনে গিয়েছিলেন কিনা তা ঠিক জানেন না পরিবারের লোকজন। তবে ৫ আগস্ট বিকালে সিলেট নগরীতে বিজয় মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। হয়তো নিজের জীবনের বঞ্চনাই তাকে তাগিদ দিয়েছিল মিছিলে শামিল হতে। মিছিলটি কোতোয়ালি থানার সামনে এসে পুলিশের প্রতিরোধের
মুখে পড়ে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ক্বীনব্রিজ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে মারা যান কামরুল।
সিলেটের ঢাকা দক্ষিণের কানিশাইলে শহীদ পাভেল আহমেদ কামরুলের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সাথে। বাবা মো. রফিক আহমদ পেশায় কৃষক। চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন কামরুল।
মো. রফিক আহমদ বলেন, বয়স আর অসুস্থতার কারণে ছেলেরাই সংসারের খরচ জোগানোর চেষ্টা করে। মাদ্রাসার পড়াশোনার ব্যয় আর সংসারে দুইটা টাকা দিবে, এই আশায় আমার বাচ্চাটা শহরে গেল। অথচ তাকে বিনা দোষে বুকে গুলি করে খুন করা হলো! শুধু আমার বাচ্চা বলে বলি না, কারও বাচ্চাকেই কেউ যেন এমন না খুন করে। একটা বাচ্চাকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে কত কষ্ট হয়, যে সন্তান হারায় সেই শুধু জানে।
পাভেল আহমেদ কামরুল হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে সুবিচার পাবেন বলে আশা করেন রফিক আহমদ। তিনি বলেন, ছেলেকে আর ফিরে পাব না। একটু দেরি হচ্ছে তবে আশা করি বিচার পাব। আর আমার ছেলেকে শহীদ আখ্যা দিয়েছে মানুষ, এটা আমার ছেলের প্রতি সম্মান। আমি এটাই মনে করি, আল্লাহ যেন আমার ছেলেরে অনেক সুখে রাখেন।
ছেলে হারানোর শোকে কথা বলতে পারেননি মা দিলারা বেগম। বড় ভাই পিপলু আহমদ বলেন, কামরুল মাদ্রাসার পড়াশোনাটা শেষ করতে চেয়েছিল। যেকোনো অন্যায় দেখলে সে তার যৌক্তিক প্রতিবাদ করত। কাজ করেও পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু একটা গুলি আমাদের পরিবারের সব স্বপ্ন শেষ করে দিল।
ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতদূর শুনেছি ৫ আগস্ট বিকালে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিজয় মিছিল বের করা হয়। এ রকমই একটি বিজয় মিছিল সিলেট কোতোয়ালি থানা এলাকায় এলে পুলিশ অতর্কিতে গুলি চালায়। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন, আমার ভাইসহ আরও একজন মারা যান বলে শুনেছি।