• মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তান কে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

Reporter Name / ১৮৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

এ যেন নতুন বাংলাদেশ। তারুণ্যের জোয়ারে নতুন সূর্য উঠেছিলো লাল সবুজের দেশে। আর ৩ সেপ্টেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সেই পতাকা উড়লো ইতিহাস লিখে। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ। মিরাজ-লিটন-হাসান-নাহিদ রানাদের হাত ধরে নতুন কীর্তি গড়লো বাংলাদেশ। দেশের বাইরে তৃতীয় সিরিজ আর দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারানো সফরকারীরা সিরিজ জিতলো ২-০ ব্যবধানে। বিদেশের মাটিতে ৩৪ সিরিজে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। আগের দুটি সিরিজ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ক্রিকেটের দীর্ঘতম এই ফরম্যাটে এক বা একাধিক ম্যাচের সিরিজ মিলিয়ে এ নিয়ে নবম সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট পচথচলায় ১৪৫ ম্যাচে এটা তাদের ২১তম জয়, বিদেশের মাটিতে ৬৮ ম্যাচে অষ্টম জয়। এর আগে ঘরের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দু’টি করে টেস্ট জেতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডকে হারায় একবার করে। এবার পাকিস্তানকে টানা দুটি ম্যাচে হারালো সিরিজুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ।
জয়টা অবশ্য মিলতে পারতো রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনেই। যদি না শেষ বিকালে জয়ের পথে থাকা বাংলাদেশের পথ আগলে দাঁড়াত বৃষ্টি। জয় থেকে তখন ১৪৩ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ, হাতে ১০ উইকেট। পঞ্চম দিনে বৃষ্টির প্রার্থনায় তাই পাকিস্তানকেই বসতে হয়েছিল। এরপরও নিশ্চিত হার যেনেও বোলারদের নিয়ে বড় গলা করে কথা বলেছিলেন দলটির কোচ জেসন গিলেস্পি। বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে হুঙ্কার দিয়ে বলে ছিলেন পঞ্চম দিনে তার বোলাররা আরও নির্মম হবে।
তবে বাংলাদেশি ব্যাটাররাও যে জবাবটা দিতে শিখে গেছে সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন গিলেস্পি। প্রথম ইনিংসে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ যে এই টেস্টে অন্তত হারছে না, সেটা বোধয় তখনও বুঝতে পারেননি এই অজি কিংবদন্তি। শেষ পর্যন্ত তাই হারই সঙ্গী হয়েছে তার। আঘাতটা বোধয় আর সবার চেয়ে একটু বেশিই পাবেন তিনি। কেননা, নিজের প্রথম অ্যাসানমেন্টেই যে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ধবলধোলাই হতে হয়েছে তার দলের। এ কথা কি করে ভুলবেন তিনি।
প্রকৃতি নাকি সাহসীদের পক্ষে থাকে। এখানেও তাই। পঞ্চম দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও নির্ধারিত সময়েই মাঠে গড়িয়েছে খেলা। ৪২ রানে পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায়। হামজার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৯ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন জাকির। এরপর ৭০ রানে এসে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। খুররম শেহজাদের বলে মিড অফে শান মাসুদের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেয়া সাদমান ৫১ বলে ২টি চারে ২৪ রান করেন।
দুই ওপেনারকে হারালেও চাপে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। এখান থেকে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। তৃতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। শর্ট লেগে ধরা পড়ার আগে ৮২ বলে ৫টি চারে ৩৮ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিছুক্ষণ পর সাদমানের মতো হতাশা বাড়ান দারুণ করা মুমিনুল। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তোলেন তিনি, যা তালুবন্দি করতে বেগ পেতে হয়নি সাইম আইয়ুবকে। ৭১ বলে ৪টি চারে ৩৪ রান করেন জাতীয় দলের সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক।
এরপর পঞ্চম উইকেটে ৩২ রানের জুটি গড়ে বাকি পথ পাড়ি দেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। মুশফিক ২২ ও সাকিব ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের হামজা, খুররাম, আবরার ও সালমান একটি করে উইকেট নেন। 
এর আগে, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। পরে টসে জিতে বোলিং করতে নেমে পাকিস্তানকে ২৭২ রানে থামিয়ে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ২৬ রানে হারায় ৬ উইকেট। লিটন দাস ও মিরাজ এসে হাল ধরে দলকে টেনে তুলেন। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২৬২ রানে। লিটন-মিরাজের জুটিতেই জয়ের রসদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যেই রসদ কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে গুড়িয়ে দিয়ে ১৮৫ রান তাড়া করে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস)- ২৭৪/৮ (৮৫.১ ওভার) (শান ৫৭, সাইম ৫৮, বাবর ৩১, রিজওয়ান ২৯, সালমান ৫৪; মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ২৬২/১০ (৭৮.৪ ওভার) (লিটন ১৩৮, মিরাজ ৭৮, হাসান ১৩; শেহজাদ ৬/৯০) পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৭২ (৪৬.৪ ওভার) (রিজওয়ান ৪৩, সালমান ৪৭; হাসান ৫/৪৩, নাহিদ ৪/৪৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৮৫/৪ (৪৬.৪ ওভার) (লক্ষ্য ১৮৫) (জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪, মুশফিক ২২, সাকিব ২১)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category