• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ন

পা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না দিপংকরের

ডেস্ক রিপোর্ট / ১০৮ Time View
Update : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

‌‘ছয় দিন আইসিইউতে অজ্ঞান ছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি ছয়টা দিন কেটে গেছে! কীভাবে জীবন থেকে ছয়টা দিন চলে গেল টেরই পেলাম না! টানা ৫ মাস ধরে হাসপাতালে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় এখনো পা কেটে ফেলতে হয়নি। হয়তো অল্প দিনের মধ্যে বিদেশে পাঠানো হবে। কিন্তু দুশ্চিন্তা কাটছে না। আমি কি পারব, আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে!’ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন দিপংকর বালা। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে আহত হন।

দিপংকর বালা মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পাকুল্লা গ্রামের পরেশচন্দ্র বালার ছেলে। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ১০ জুলাই থেকে মাদারীপুরে যুক্ত হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রথম দিকে কলেজের ভেতরে ছোট ছোট মিছিল করি। বড় আকারে শুরু হয় চীন থেকে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ‌রাজাকার বলার পর।

দিপংকর জানান, ১৯ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার ডিসি ব্রিজ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মিছিল হচ্ছিল। বিকেল ৫টার দিকে টিউশনি করে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। মিছিল দেখে বাসায় না গিয়ে অংশ নেন মিছিলে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশ মিছিলে গুলি চালানো শুরু করে। দিপংকর বলেন, ‘ওই দিন আমিসহ মাদারীপুরের অন্তত ৪০ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হই। সব মিলিয়ে ৭০ জনের বেশি আহত হই।’

ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, দীপংকরের বাঁ পায়ে গুলি লাগে। গুলি লাগার স্থানটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সেখানে চামড়া মাংস কিছুই ছিল না। অর্থোপেডিক সার্জনরা একধরনের এক্সটারনাল ফিক্সেটল দিয়ে ফিক্সড করেন। পরে ওই জায়গায় মাংস ভরাট করা হয়। তবে দীপংকরের পা সম্পূর্ণ ঠিক হওয়া নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তিত। লম্বা সময় লাগবে। বিদেশে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায় কি না বিবেচনা করেছি। আমাদের থেকে আরও উন্নত কোনো দেশে চিকিৎসা দিতে পারলে তার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে দিপংকর বলেন, ‘পাসপোর্ট ছিল না। দুই দিনের মধ্যে আমার পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়। তারপর তা জমা নিয়েছে। আশা করি দ্রুত কোনো দেশে পাঠিয়ে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি, গুলি লাগার পর মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছিল। সেখানে ভর্তি করেনি। নিয়ে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)। সেই ১৯ জুলাই থেকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছি।’

এই ৫ মাসে পা নিয়ে দীপংকরকে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পায়ের ওই জায়গাটা ভরাট হতে দুই থেকে আড়াই মাস লেগেছে। মাংস ভরাট হতে হতে আরেক সমস্যা দেখা দেয়। হাড় বৃদ্ধি পেয়ে একটা আরেকটার মধ্যে ঢুকে যায়। ভেতরে পচন ধরে। অপারেশন করে সেই হাড় কেটে ফেলতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ দফা অপারেশন হয়েছে।

দিপংকররা তিন ভাই। বড় ভাই বিবাহিত। তাদের এক সন্তান আছে। দিপংকরের মা-বাবা, তিন ভাই, বৌদি, ভাতিজা- সবাই একসঙ্গে থাকেন। তিনি মেজো। ছোট ভাই অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

আর্থিক সমস্যার বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, দাদা আর আমি টিউশনি করে সংসার চালাতাম। এখন সংসারে বিরাট প্রভাব পড়ছে। সরকার এক লাখ টাকা দিয়েছে। তাতে কিছুই হয়নি। প্রথম পর্যায়ে ২০ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সরকার থেকে ওষুধপত্র দেয়নি। এমন একজন রোগী আমি- মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আনতে ওই দিনই অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া লেগেছে ১৮ হাজার টাকা।

পা দেখিয়ে বলেন, পা তো ভাঙা ছিল। অনেকখানি ঝুলে পেড়েছিল। ওই দিনই পায়ে রড লাগায়। তাতে দিতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা। কেউ ভাবেনি যে পা থাকবে। শুধু এখানকার ডাক্তারদের চেষ্টায় পা আছে। না হলে পা কেটেই ফেলতে হতো।

তিনি বলেন, ‘৬ দিন আইউসিইউতে অচেতন অবস্থায় ছিলাম। তখন অনেক দামি দামি ইনজেকশন কিনে দিতে হয়েছে। ২০ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ দিনে না হলেও আমার চিকিৎসায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই যে এখানে এতদিন আছি, আমার সঙ্গে তিনজন লোক থাকে, আমাকে তো ভালো ভালো মাছ, মাংস, ফল খাওয়ানো লাগবেই। তিন বেলা খেতে কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়! আমারই দিনে প্রায় ১ হাজার টাকা লাগে। এক ডাবের পানি ১৫০ টাকার নিচে হয় না। এ পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।’
দেশের জন্য দীপংকর যা করেছেন, তা সবাই মনে রাখুক, সেটাই তিনি চান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category