লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের পূর্ব চলবলা সতীরপাড় এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার কৃষিকাজে সফল এক নারী উদ্যোক্তা। তিনি ৫ বছর ধরে পুরুষ চাষিদের পাশাপাশি বাদাম, ভুট্টা ও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন। তার পরিশ্রম এবং কঠোর মানসিকতার কারণে এখন তিনি স্থানীয় সমাজে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
জেসমিন আক্তারের কৃষিকাজের শুরুটা ছিল শখের বশে। ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি তার আগ্রহ ছিল। শখের শাকসবজি চাষ করতে করতে এটি তার অভ্যাসে পরিণত হয়। তার স্বামী প্রবাসী। তিনি বসে না থেকে নিজেই কৃষিকাজের মাধ্যমে পরিবারে আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। চলতি বছর তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তার চাষের ফলন এ বছর ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী।
জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকলেও তিনি সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেন। কৃষিকাজের মাধ্যমে আমাদের পরিবারে বাড়তি আয় হচ্ছে। যা দিয়ে দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থা হচ্ছে। কৃষিকাজ আমি ভালোবাসি। তাই আমি বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করি। বাদামের পাশাপাশি ফুলকপি, পেঁয়াজ, রসুন, তিলসহ আরও বেশকিছু সবজির চাষ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর বাদাম বিক্রি করেছি ১২-১৩ হাজার টাকা মণ দরে। আমাদের এলাকায় বাদাম চাষ খুব বেশি হয় না। তাই দামও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাদাম তোলা শেষ হলে ভুট্টার চাষ শুরু করব।’
জেসমিন আক্তারের সফলতার পেছনে রয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করে তিনি কৃষিকাজে সফল হয়েছেন। তিনি শুধু বাদাম চাষে সীমাবদ্ধ থাকেন না; বরং হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালনের ক্ষেত্রেও সফল। এভাবে কৃষিকাজের পাশাপাশি অন্যান্য পশু পালন করে তিনি বাড়তি আয় নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় আলাল মিয়া বলেন, ‘জেসমিন আক্তার একজন পরিশ্রমী নারী। তিনি কৃষিকাজে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে তিনি একের পর এক ফসলের সফল চাষ করছেন।’ আলাল মিয়া আরও বলেন, ‘জেসমিন আক্তারের কৃষিকাজে আত্মনির্ভরতা ও পরিশ্রম দেখে অনেক নারীই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষিকাজে আসতে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘জেসমিন আক্তারের মতো নারীরা যদি কৃষিকাজে এগিয়ে আসেন, তবে দেশে কৃষির চেহারা আমূল পরিবর্তিত হবে। নারীদের কৃষির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি কৃষির উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে জেসমিন আক্তারের মতো নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।’