সন্তানের প্রতি মায়ের ভূমিকা তুলনাহীন। আর সন্তানের জীবনে বাবা হলেন বটবৃক্ষ স্বরূপ। যে বৃক্ষের শীতল ছায়ায় সন্তান কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই পরম মমতার পরশে বেড়ে উঠতে থাকে। চরম হতাশায় কিংবা প্রাপ্তির অনাবিল আনন্দে যাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। বাবার আশীর্বাদ যেমন সন্তানের সব বাধাবিপত্তি দূরে ঠেলে দেয় ঠিক তেমনই বাবা বুক দিয়ে সন্তানকে সারা জীবন আগলে রাখে। আব্বা, আব্বু, ডেডি, ফাদার যেভাবেই উচ্চারণ করি না কেন, চোখের সামনে বটবৃক্ষের মতো একজনের ছবিই ভেসে ওঠে; যা ‘… রক্তের সাথে রক্তের টান/ স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে…’! আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাবা দিবসে বাংলাদেশেও টিভি, অনলাইন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে থাকে নানা আয়োজন। বিভিন্ন সংগঠন থেকেও আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের।
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, বাবার শখ, সুখ, আহ্লাদ, আনন্দ বিসর্জন দিয়ে নিজেকে ক্রমাগতভাবে পুড়িয়ে সন্তানকে সুখী দেখতে চান। প্রতিটি সন্তানের জীবন গঠিত হয় বাবার শ্রমে আর ঘামে। শুধু তাই নয়, সন্তানকে আগলে রাখতে গিয়ে বাবা শুধু নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দই নয়, কখনোবা বিলিয়ে দেন নিজের জীবন। এই সন্তান বোধসম্পন্ন হয়ে কতটুকুই বা দিতে পারে এর প্রতিদান। আসলে বাবাদের ভূমিকার প্রতিদান হয় না কখনও। তবে হ্যাঁ, অন্তত বাবাকে জড়িয়ে ধরে এটুকু তো বলা যায়, বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বলা যায়, ‘বাবা মানে হাজার বিকেলে আমার ছেলেবেলা, বাবা মানে রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা, বাবা মানে কাটছে ভালো, যাচ্ছে ভালো দিন/ বাবা মানে জমিয়ে রাখা, আমার অনেক ঋণ।’ আর যার বাবা বেঁচে নেই, বলা চলে তার একটা পৃথিবীই নেই। বাবার সঙ্গে দেখা হবে না, কথা হবে না এটি যেন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। মনে বেজে ওঠে ‘বাবা কতদিন, কতদিন দেখিনি তোমায়…’। জানা যায়, বাবাদের প্রতি ভালোবাসা, সমর্থন,
সম্মান এবং প্রশংসার জন্য বাবা দিবস পালনের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯০৮ সালে। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃদিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুনের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।