• মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

বিয়ানীবাজার সরকারি হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ

সামিয়ান হাসান / ৩০৯ Time View
Update : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় ১২ বছর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১৫ বার সময় বর্ধিত করে একাই খাবার সরবরাহ করছেন সঞ্জিব কর নামের জনৈক ব্যক্তি। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে স্থিতাবস্থা জারীর আদেশ নিয়ে আসেন খাবার সরবরাহকারী এই ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কর্ণধার। আর এই সুযোগে কোন তদারকি না থাকায় রোগীদের মাঝে তিনি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারীভাবে সরবরাহ করা সকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার এতোই নিম্নমানের যে এগুলো খেয়ে রোগীরা আরো অসূস্থ হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া রোগীদের খাবার যে রান্নাঘরে তৈরী করা হয় তার অবস্থাও চরম অস্বাস্থ্যকর। গত কয়েক বছর থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তাতে কোন গরজ নেই। হাসপাতালটিতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছেন রোগীরা। বরাদ্দে সপ্তাহে দুদিন খাসির মাংস থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। রুই-কাতল মাছের স্থলে রোগীরা পাচ্ছেন পাঙাশ মাছ। হাসপাতালটিতে ঠিকমতো খাদ্য তালিকা না থাকায় রোগী কিংবা স্বজনরা পরিমাণের বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারছেন না।
জানা যায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশীরভাগ আবাসিক রোগী মহিলা ও শিশু। সিলেট জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে এই প্রতিষ্টানটি ভালো মানের সেবা দেয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা তুলনামুলক বেশী। একাধিকবার হাসপাতালটি জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেছে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশনে সফলতার কারণে দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে এ প্রতিষ্টান। সেবার মান নিয়ে এ প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে কারো বড় ধরণের কোন অভিযোগ নেই। শুধুমাত্র খাবার সরবরাহ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখানে বোয়াল মাছের বদলে রোগীদের দেয়া হয় পাঙ্গাস মাছ, এমন বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যান্য যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় সেগুলোও অস্বাস্থ্যকর। হাসপাতালের প্রধান সহকারী রফিক উদ্দিন বলেন, কে.বি সাইন নামক একটি প্রতিষ্টান গত কয়েক বছর থেকে এখানে খাবার সরবরাহ করছে। ২০১৩ সালে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে সংক্ষুব্দ হয়ে ওই প্রতিষ্টানের কর্ণধার সঞ্জিব কর একই বছরে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং ১১৬৪৮) দায়ের করেন। এরপর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনিই এখনো পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছেন।
সূত্র জানায়, মাথাপিছু রোগীর জন্য প্রতিদিন পাউরুটি ২৪৪ গ্রাম, চাল ৪০০ গ্রাম, তেল ৪০ গ্রাম, মাংস (খাসি) ২৫৪ গ্রাম, মুরগী (দেশী) ২৮২ গ্রাম, মাছ (রুই, কাতল, মৃগেল) ২৮২ গ্রাম, পাঙ্গাস ৪২৩ গ্রাম, সবজি ৩৫০ গ্রাম, পিঁয়াজ ৫০ গ্রাম, রসুন ২০ গ্রাম, জিরা পাঁচ গ্রাম, আদা পাঁচ গ্রাম, তেজপাতা পাঁচ গ্রাম, এলাচ ১০ গ্রাম, দারুচিনি ১০ গ্রাম ও লবঙ্গ পাঁচ গ্রাম সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীদের সপ্তাহে তিনদিন মাংস ও চারদিন মাছ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ১০ দিনেও একদিন মাংস সরবরাহ করা হয়না। বাকি দিন রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া হয় পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ। মাছের মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে রোগীদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিম্নমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই খাবার খেতে চান না। এখানে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপার ভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন।
হাসপাতালের বাবুর্চি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এখানে রোগীদের খাবারের কোন তালিকা নেই। ঠিকাদাররা যখন যা দেন তাই আমরা রান্না করে সরবরাহ করি। হাসপাতাল থেকে সকালে যেসব পাউরুটি সরবরাহ করা হয় তা মুখে দেয়া যায়না বলে জানান শ্বাসকষ্টের রোগী আব্বাছ উদ্দিন (৬৫)। আবার মাছ-মাংস রান্নায় মসলা কেবলমাত্র ছুঁয়ানো হয় বলে রোগীনী রুবিনা বেগম (২৯) অভিযোগ করেন। সরবরাহ করা ভাতও দূর্গন্ধযুক্ত বলে তিনি জানান। রোগীরা অভিযোগ করেন, অনেক সময় ভাতে মৃত তেলাপোকা, বিভিন্ন ধরণের পোকা ও ময়লা জিনিস পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কে.বি সাইনের স্বত্তাধিকারী সঞ্জিব কর দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে খাবার ও মনোহারী দ্রব্য সরবরাহ এবং ধোলাই’র টেন্ডারে অংশ নেন এবং নিয়মিত তিনি টেন্ডার পানও বটে। শুধুমাত্র ২০১৩সালে এর কিছুটা ব্যাতিক্রম হওয়ায় তিনি বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে রীট করায় আদালত তার পক্ষেই রায় দেন। এ প্রসঙ্গে সঞ্জিব করের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। রোগীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কারো ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবেনা বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আপীল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেন তাহলে তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category