• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন

ভুয়া বিল দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১১৯ Time View
Update : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

ভুয়া বিল দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলছেন দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াসিন আরাফাত এবং হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক ওয়াহিদ মিয়া। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সুনির্দিষ্ট ১৫টি অভিযোগ উল্লেখ করে সম্প্রতি সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মোহাম্মদ সালমান নামের এক ব্যক্তি। অভিযোগকারী নিজেকে দিরাই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক বলে উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে, অভিযোগের তদন্ত করতে গত বুধবার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জনকে প্রধান করে ডেপুটি সিভিল সার্জন ও একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
অভিযোগকারী জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারী হাসপাতালটিকে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। ভাড়া না দিয়ে হাসপাতালের বাসা দখল করে থাকছেন প্রধান সহকারী ওয়াহিদ মিয়া। ওয়াহিদ মিয়া সম্প্রতি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ থানার একটি মামলায় আট দিন হাজতবাস এবং মাসের পর মাস দিরাই হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকেও বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। হাসপাতালের জেনারেটর তিন বছর ধরে নষ্ট হলেও প্রতি মাসে জ্বালানি খরচ উত্তোলন করে পকেটস্থ করছেন তিনি। হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ আসা বরাদ্দের টাকা নামমাত্র কাজ করে অধিকাংশ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রধান সহকারী ।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসপাতালের আওতাধীন জগদল ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ভাটিপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, পেরুয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কোনো টাকা খরচ না করেই বিভিন্ন সময়ে খরচের ভুয়া বিল বানিয়ে লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন। আউটসোর্সিং পরিচ্ছন্নকর্মী প্রতিমা বিশ্বাসের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বেতন-ভাতা ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। কিন্তু তৎকালীন সিভিল সার্জন বিষয়টি অবগত হলে প্রতিমা বিশ্বাসকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ডা. ইয়াসিন আরাফাত ও ওয়াহিদ মিয়া। আউটসোর্সিং কর্মী বদরুল আলমের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বেতন ভাতার ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আউটসোর্সিং কর্মী আলী নুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পোস্টিং দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

পরিচ্ছন্নকর্মী প্রতিমা বিশ্বাস জানান, পেটের দায়ে দিন-রাত কাজ করেছি। তবুও ইয়াসিন আরাফাত স্যার হাসপাতাল থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন, তখন আরএমও রায়হান স্যারের শরণাপন্ন হয়ে কাকুতিমিনতি করে সিভিল সার্জন স্যারকে অবগত করি। এরপর আমাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত রাখেন, যাতে কাউকে কিছু না বলি। ২৩ সালের একটি টাকাও পাইনি।’

আউটসোর্সিং কর্মী শাখাওয়াত বলেন, আমাকে এক মাসের বেতন বাবদ ১৬ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা স্যার রেখে দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ডা. ইয়াসিন আরাফাত দিরাইয়ে যোগদান করার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সপ্তাহে দুয়েক দিন দিরাইয়ে এলেও তাড়াহুড়ো করে সিলেটের বিশ্বনাথে চলে যান রোগী দেখতে। মাঠ পরিদর্শনে না গেলেও মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা টিএ বিল আত্মসাৎ করছেন। সরকারি গাড়ি সিলেটে নিজের বাসায় রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন এবং জ্বালানি বিল উত্তোলন করছেন।

অভিযুক্ত প্রধান সহকারী ওয়াহিদ মিয়া বলেন, আমি দুর্নীতি করিনি। হাজিরা খাতায় নয়, আমি প্রতিদিন বায়োমেট্রিক মেশিনে উপস্থিতি দিয়েছি। আমি থানায় ছিলাম, জেল হাজতে নয়।

দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াসিন আরাফাত বলেন, অভিযোগগুলো মোটেও সঠিক নয়, আমি এক দিনও হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকি নাই। অফিসিয়ালি মিটিং থাকলে বাহিরে থাকতে হয়।

দুই বছর ৮ মাসে অনেক ভালো কাজ করেছি, এমন অভিজ্ঞতার জন্য প্রমোশন পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। আমি হাসপাতালের অফিস সময়ের পরই বিশ্বনাথ গিয়ে রোগী দেখি। প্রধান সহকারী হাজতে ছিল কি না আমার জানা নেই, তবে তার ফোন তিন-চার দিন বন্ধ ছিল। বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। শিগগির তদন্ত কাজ শুরু হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category