• মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

ভূমি জটিলতায় থমকে আছে বিয়ানীবাজার-শিকপুর সেতুর নির্মাণ কাজ!

সামিয়ান হাসান / ৩৩ Time View
Update : সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

ভূমি জটিলতায় থমকে আছে বিয়ানীবাজার-শিকপুর সেতুর নির্মাণ কাজ। দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কুশিয়ারা নদীর উপর বহরগ্রাম-শিকপুর সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী শুরু হয়। কিন্তু ভূমি অধি:গ্রহণে স্থানীয়দের আপত্তির কারণে এই সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলার লাখো মানুষ। বহরগ্রাম-শিকপুর সেতু নির্মাণ হলে সিলেটের সাথে দূরত্ব অনেকটা কমে আসার পাশাপাশি দূর্ভোগ লাগব হবে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ এবং  বড়লেখা উপজেলার মানুষের। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর হবে সেজন্য সম্প্রতি দ্রুত এই সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে গোলাপগঞ্জ এবং বড়লেখা উপজেলার মধ্য উপজেলা বিয়ানীবাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাক্কলিত এই প্রকল্পের জন্য জমি অধি:গ্রহণ করে সরকার। তবে সংশ্লিষ্ট জমি মালিকদের কোন ক্ষয়ক্ষতি প্রদান করা হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে আপত্তি জানান।

শিকপুর সেতু এলাকার বাসিন্দা লাভলু আহমেদ বলেন, আমারাও চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা হোক কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য কয়েক মাস আগে জমি অধি:গ্রহণ করা হলেও জমির মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পাননি। তাছাড়া সরকার তাদের জমি নিলেও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিকল্প পুনর্বাসন কিংবা আর্থিক সহযোগিতা করেন। সে বিষয়টি সিলেটের জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত এর সূরাহা হয়ে গেলে স্থানীয়দের আর কোন আপত্তি থাকবে না। 

সূত্র জানায়, এক সময়ের ব্যস্ততম সিলেট-গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার রোডের বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরি দিয়ে এখন আর ছোট-বড় গাড়ি এপার-ওপার হয় না। প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু হওয়ায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে ২০১৫ সালে হঠাৎ করে বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরিঘাটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে এ রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর নদীর পাড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের পন্টুন। এখন এলাকার লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছোট ডিঙি নৌকা।

এদিকে বহরগ্রাম-শিকপুর সেতু নির্মাণ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে বিয়ানীবাজারে মানববন্ধন করেন ৩ উপজেলার সচেতন নাগরিকবৃন্দ। মানববন্ধনের সমন্বয়কারীর অন্যতম সদস্য প্রবীন সাংবাদিক চৌধুরী দেলোয়ার হোসেন জীলন বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে শিকপুর সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্তি করার জোর দাবি জানিয়েছি মানববন্ধন থেকে। এই সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে খুব কম  সময়ের মধ্যে মানুষ জেলা শহর সিলেট যেতে পারবে। তাছাড়া সেতু এলাকার বাসিন্দাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। স্থানীয়দের ক্ষতিপূরণ দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণ কাজ যেন সমাপ্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন আন্তরিকভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টা মিমাংসা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেট শহরের সাথে বিয়ানীবাজার উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার মানুষের সহজতর যোগাযোগের জন্য কুশিয়ারা নদীর উপর নির্মাণাধীন বহরগ্রাম-শিকপুর সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এখন সময়ের দাবি। এই সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি। 

সিএনজি চালক রাহিম আহমেদ বলেন, এই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে আমরা কম সময়ের মধ্যে সিলেট যেতে পারবো। এতে যাত্রীদের সময় যেমন বাচবে তেমনি আমাদের উপার্জনও বাড়বে।

শিকপুর সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন বলেন, শিকপুর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। স্থানীয়দের আপত্তির মুখে কাজটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সিলেটের জেলা প্রশাসক ভূমি অধিগ্রহণ  জটিলতার অবসান করতে একাধিক বার মিটিং করেছেন। আগামী ১৫ তারিখে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টা সমাধানের জন্য মিটিং ডেকেছেন। আশা করি ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর এই সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে আমরা শিকপুর সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিতে পারবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category