অযত্ন, অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে থাকা ফেরির কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। জেলার বিভিন্ন স্থানে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ফেরিসহ সড়ক বিভাগের মূল্যবান এসব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেই। এ সুযোগে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে ফেলে রাখা এসব মালামাল।
নদী-খালবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত এক জনপথ পিরোজপুর। জেলার অভ্যন্তরে অসংখ্য নদীনালা ও জেলার চারপাশে কালিগঙ্গা, মধুমতি, কঁচা ও বলেশ্বরের মতো বড় বড় নদী থাকায় এক সময় জেলার অভ্যন্তরীণ ও দেশের অন্যান্য স্থানে সড়ক যোগাযোগের জন্য ফেরিই অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে জেলার ১১টি স্থানে গড়ে ওঠে ফেরি সার্ভিস। যার মধ্যে অন্যতম ছিল পিরোজপুর-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের কঁচা নদীর বেকুটিয়া, পিরোজপুর-মঠবাড়িয়া সড়কের কঁচা নদীর চারাখালী ফেরি, পিরোজপুর-খুলনা মহাসড়কের বলেশর নদীর ফেরি ও পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ সড়কের মধুমতি নদীর ফেরি ছিল অন্যতম। ইতোমধ্যেই পিরোজপুর সদরের বলেশ্বর, ইন্দুরকানীর বলেশর ও কঁচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে, বৈঠাকাঠা সড়কের দীর্ঘা ও কালিগঙ্গা এবং মধুমতি নদীতে ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় ওই সব স্থানের ফেরি ও পন্টুনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে এসব ফেরি ও পন্টুন পতিত অবস্থায় পড়ে থাকায় ঝড়-বৃষ্টি ও রোদে পুড়ে দিনে দিনে নষ্ট ও ধংস হয়ে যাচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। নদীর চরে জনমানবশূন্য জায়গায় রক্ষণাবেক্ষণের কেউ না থাকায় প্রতিনিয়তই চুরি হয়ে যাচ্ছে পড়ে থাকা ফেরির মালামাল ও যন্ত্রাংশ।
স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া ফেরিঘাটের পাশে নদীর চরে ফেলে রাখা বেশ কয়েকটি ফেরি নষ্ট হয়ে গেছে। রাতের আঁধারে একটি চোরচক্র এগুলোর মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি এসব সম্পত্তি রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদারকি না থাকায় এসব ফেরি ও পন্টুন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রকাশ্যে চুরি হচ্ছে ফেরির মালামাল। বাজারে লোহার দাম চড়া থাকায় রাতের আঁধারে ফেরি ও পন্টুুনের লোহা কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরচক্র। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে পিরোপজপুর-স্বরূপকাঠি সড়কের কাউখালী উপজেলার আমড়াঝুড়ি এবং পিরোজপুর-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের চারাখালী ফেরি দুটি চলমান আছে। জেলায় মোট ১২টি ফেরি ও পন্টুন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। যার বেশির ভাগের মালামাল ইতোমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে।
এদিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট-দেওনাখালি খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেকসহ অনেকে বলেন, আমরা খেয়াঘাট এলাকা থেকে হুলারহাট হয়ে জেলা শহরের সঙ্গে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করি। কিন্তু এ খেয়াঘাট থেকে আসা-যাওয়া করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি। অব্যবহৃত ফেরিগুলো থেকে এখানে একটি ফেরির ব্যবস্থা করা হলে আমরা যানবাহন নিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে কাউখালী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মানুষ চলাফেরা করতে পারতাম।