• মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

সংযোগ সড়ক ছাড়া ৮ সেতু নির্মাণ, ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৩১ Time View
Update : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় সংযোগ সড়কবিহীন আটটি সেতু স্থানীয় জনগণের জন্য বিরাট ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২০১৫-১৬ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসব সেতু নির্মিত হলেও এখনও সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (চতুর্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুগুলো এলাকাবাসীর দৈনন্দিন কাজে তেমন কোনো উপকারে আসছে না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের পাশে সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাটিপাড়া জামে মসজিদের পাশে ৩২ ফুট দৈর্ঘের সেতুটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজমণি কনস্ট্রাকশন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সেতুটির কোনো সংযোগ সড়ক নেই।

একই অর্থবছরে ওই প্রকল্পের অধীনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রাম-বানিবহ খালের হারান মণ্ডলের বাড়ির পাশে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৯ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৩৬ ফুট লম্বা সেতু। এ সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুর রহিম মোল্যা। ওই সেতুটির সঙ্গেই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের সৈয়দ পাঁচুরিয়া মৌজায় সৈয়দ পাঁচুরিয়া খাল এবং চন্দনী ইউনিয়নের আজুগড়া মৌজায় আজুগড়া খাল মিলে মোট ১.০৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও আনুষঙ্গিক কাজের ভিত্তিফলক বসানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সংযোগ সড়ক নেই।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (চতুর্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সেচ বিভাগের বাস্তবায়নে কাজ করেছে ঢাকা উত্তরা ৬ সেক্টরের মেসার্স মানিক এন্টারপ্রাইজ। এ সেতু থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সৈয়দ পাঁচুরিয়া মধ্যপাড়া মন্দিরসংলগ্ন খালের ওপর একই প্রকল্পের অধীনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় ৩২ ফুট একটি সেতু। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ টাকা। তবে কোনো সংযোগ সড়ক নেই।

একই এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের সৈয়দ পাঁচুরিয়া খাল ১.৫৮০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও আনুষঙ্গিক কাজের ভিত্তিফলক বসানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) বিএডিসি ফরিদপুর প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সেচ বিভাগের বাস্তবায়নে কাজ করেছে রাজবাড়ীর খোন্দকার এন্টারপ্রাইজ ও বিসমিল্লাহ কনস্ট্রাকশন। এ সেতুটিরও একপাশে সড়ক, অন্যপাশে ফসলি জমি। একই গ্রামের অনতিদূরে আলতাফের বাড়ির কাছে আরও একটি সেতু। ১৫ ফুট লম্বা সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। এই সেতুটিরও শুধু একপাশে রাস্তা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মরডাঙ্গা খালের উপর একটি সেতু নির্মিত হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। ২৮ লাখ ৯ হাজার ৯৪৫ টাকা খরচে ৩৬ ফুট লম্বা নির্মিত সেতুটির কোনোদিকেই সংযোগ সড়ক নেই।

একই প্রকল্পের সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া সিরাজ মাস্টারের বাড়ির পাশে খালের উপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এ সেতুটি লম্বায় ২৮ ফুট। এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২৩ লাখ দুই হাজার ৯০৩ টাকা। পরের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই গ্রামে ফজের উদ্দিনের বাড়ির পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৮ টাকা। নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলার রায়নগরের মেসার্স খন্দকার এন্টারপ্রাইজ। তবে তাতে কোনো সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, জনগণের উপকারে আসছে না, তাহলে কার স্বার্থে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে?

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের প্রকৌশলী বিজয় প্রামাণিক বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ এবং এমপির অনুমোদনের ভিত্তিতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ হয়ে থাকে। স্থানীয় জনসাধারণের উপকারের জন্য নির্মাণ করা হয় এসব। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়া দুঃখজনক। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category