সুনীল চন্দ্র শীল। বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের (পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম) সাবেক প্রধান শিক্ষক। রেলের স্কুলে চাকরির সুবাদে ছেলেকেও চাকরি দিয়েছেন রেলে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের মতো মর্যাদাপূর্ণ পদে থেকে শিক্ষককূলের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন দুর্নীতি, অনিয়ম আর অর্থ আত্মসাৎ করে। পতিত স্বৈরাচার আমলে দুই বছর ৪ মাস প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন দেড় কোটি টাকা।
এ ছাড়া রেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন দেড় কোটি টাকা; ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ দিয়েছেন খণ্ডকালীন শিক্ষক ও পিয়ন। চলতি বছরের ২ জুন অবসরে গেলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী আগরতলা সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তবে শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগ করতে পারেননি। তার ছেলে শুভ সহকারী লোকোমাস্টার পদে চাকরি করলেও দায়িত্ব পালন করছেন পাহাড়তলী কন্ট্রোল রুমে।
সাবেক প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র শীলের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানাজানি হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়েলফেয়ার অফিসের তদন্তে। গত ২৪ নভেম্বর ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর মোজাফফর আহামদ পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা (সিপিও) জোবেদা আক্তার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে জোবেদা আক্তার জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনও তার দপ্তরে পৌঁছেনি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, বিদ্যালয় তহবিলে জমাকৃত অর্থ আত্মসাৎ ও ছাত্রদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে আদায়কৃত টাকা লুটপাট নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব পান মোজাফফর আহামদ। গত ৩০ অক্টোবর সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার শেখ ফরিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তদন্তভার দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করেন ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি স্কুলে ৩১ বছর চাকরি করেছেন সুনীল চন্দ্র শীল। নগরীর সল্টগোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১ মাস ছাড়া বাকি সময় পাহাড়তলী রেলওয়ে সরকারি স্কুলেই শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে জনতা ব্যাংকের নগরীর আমবাগান শাখায় এক কোটি তিন লাখ ৪১ হাজার টাকা জমা ছিল। ৩ জুন পর্যন্ত ছিল এক কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২ জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে বিভিন্ন খাতে তোলা টাকার মধ্যে দেড় কোটি টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারে আত্মসাৎ করেছেন। তার দায়িত্বকালে ছাত্রদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে আদায়কৃত টাকা অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন। ছাত্রদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা যথাযথভাবে ব্যাংকে জমা করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া তার দায়িত্বকালে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে আদায়কৃত ১৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখেছেন। ব্যাংকের মাধ্যমে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। তার অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ লুটপাটের জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তদন্তে। এসব অপরাধের জন্য রেলওয়ে কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা আইন ১৯৬১ ধারা ৩(ক,খ,গ) অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তি ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সুনীল চন্দ্র শীল দাবি করেছেন, তিনি বিদ্যালয়ের অন্তঃকোন্দলের শিকার। শিক্ষকদের সিনিয়রিটি তালিকা নিয়ে তৈরি জটিলতার কারণে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষকদের একটি পক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ১৭ লাখ টাকা নিজের হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করে ১৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন কিন্তু বাকি টাকা দিতে পারেননি।
প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা জোবেদা আক্তার বলেন, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা আইন বিভাগে পাঠাব সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।