• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

সাবেক মেয়রের বাসার পথে বিএনপি নেতার মাছবাজার!

ডেস্ক রিপোর্ট / ১১৭ Time View
Update : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

সিলেট নগরীর পাঠানটুলা-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক লাগোয়া এলাকা। তারাপুর চা-বাগানের পাশে টিলাভূমিতে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসা। বাসাটি সেমিপাকা আসাম প্যাটার্নের। ‘মেয়রের বাসভবন’ থাকায় আগে পুরো এলাকা ছিল পরিপাটি। মূল সড়ক থেকে বাসায় যাওয়ার যে বিকল্প পথ তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গাটিতে এখন বসেছে মাছের বাজার। বিএনপি নেতার মালিকানাধীন জায়গা হওয়ায় বাজারটি বিএনপি নেতার মাছবাজার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

পাঠানটুলা এলাকার পশ্চিমপাশে ৩০০ মিটারের মধ্যে আছে মদিনা মার্কেট বাজার ও পূর্বপাশে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে আছে সুবিদবাজার। সিলেট সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত এই দুটি বাজারে মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ সব নিত্যপণ্য পাওয়া যায়। শুধু মদিনা মার্কেটেই রয়েছে চারটি মাছের বাজার। তার পরও পাঠানটুলা এলাকায় সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসার সামনে মাছের বাজার বসিয়েছেন বিএনপি নেতা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর এই বাজার বসানো হয়। শুধু এই বাজারই নয়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়ক, ফুটপাত আবারও হকার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। একইভাবে পাঠানটুলা এলাকার সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও পার্শ্ববর্তী খালি জায়গায় পাঠানটুলা নবাবী শাহী ঈদগাহ লাগোয়া সড়কের পাশে মাছ ও সবজি নিয়ে বসতেন ভাসমান বিক্রেতারা। পরবর্তী সময়ে সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহ জামাল নুরুল হুদা তার নিজস্ব জায়গায় মাটি ভরাট করে বাজার করে দেন। এই বাজারের নাম দিয়েছেন ‘সোনালি ন্যায্যমূল্যের বাজার’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়রের বাসভবনটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত। টিলাভূমির কিছু অংশে সিঁড়ির সামনে ফটক তালাবদ্ধ। তারাপুর চা-বাগান থেকে বাসায় যাতায়াতের দুটো রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে বিকল্প আরেকটি পথ মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া ছিল। এ পথটি ঈদগাহের জায়গায়। মূল সড়ক থেকে সাবেক মেয়রের বাসার দেয়াল পর্যন্ত প্রায় ১৫ ফুট চওড়া করে মাটি ভরাট করা হয়েছে। সেখানে দুই পাশে বসে মাছ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

বাজার দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাসমান ব্যবসায়ীরা সড়কে ব্যবসা করতে নানান সমস্যা হয়। তাই আমাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে ভূমির মালিক সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ জামাল নুরুল হুদা এই স্থান দিয়েছেন। সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত বাজারের কার্যক্রম চলমান থাকে।

এলাকার স্থায়ী দুই বাসিন্দা বলেছেন, মাছবাজারটি পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত, তারাই ৫ আগস্ট সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মাছবাজারের সামনে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এর আগে অবশ্য সাবেক মেয়রের খালি বাসাটি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। সাবেক মেয়রের বাসার বিকল্প পথকে বন্ধ করতে কৌশলে মাছের বাজার বসানো হয়েছে, এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা রয়েছে।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ জামাল নুরুল হুদা জানান, তিনি জায়গাটির যৌথ মালিকদের একজন। এ জায়গার একাংশ সাবেক মেয়রের বাসার বিকল্প পথ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু পথ বা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়নি। মাছবাজার কেন? এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, যারা মাছ বিক্রি করছেন, তারা আমার এলাকার। সড়কের পাশে বসে কেনাবেচা করতেন। এরা প্রকৃত মৎস্যজীবী। তাই জায়গাটি ফাঁকা থাকায় তাদের ব্যবহার করতে দিয়েছি। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। বাজারটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী।

এদিকে, সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সুবিদবাজার, পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চলাফেরা বেশি থাকে। তাই একদিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে যেমন যানবাহনের চাপ থাকে, তেমনি শিক্ষার্থীদের বহনকারী ব্যক্তিগত যানবাহনও থাকে। ফলে এই সড়কে সকাল থেকেই যানজট লেগে থাকে। এই মাছবাজারের কারণে এখন ওই সড়কে যানজট আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

মাছবাজারটির বৈধতার বিষয়ে যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) বাজার শাখা থেকে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়া নগরীতে কোনো বাজার বসানোর নিয়ম নেই। এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গাতেও বাজার বসানো যাবে না।

এ ব্যাপারে সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা নেহার রঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, যদি অবৈধ বাজার বসানোর কোনো লিখিত অভিযোগ আসে, তা হলে তা পর্যবেক্ষণ করে সত্যতা পেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পাঠানটুলার মাছবাজারের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category