• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন

স্বামী হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন শহীদ জসিমের স্ত্রী রাজিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট / ১১৭ Time View
Update : রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ দেশে ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে বহু মানুষ যেমনি প্রাণ হারিয়েছেন তেমনি অনেকেই হয়েছেন আহত। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। এমনই একজন রিকশাচালক মো. জসিম। তাকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া।

ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। আর এই সময়ে নগরীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার গুয়ালবাড়ি

মোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা জসিম (৩৫) গত ২১ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

রাজিয়া জানান, তার স্বামী ওইদিন মাগরিবের নামাজ পড়তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুয়ালবাড়ি মোড়ের একটি মসজিদে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে রাস্তার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে পড়ায় তিনি মসজিদে না ঢুকে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথেই একটি গুলি তার পিঠে লাগে। একটি ছবিতে দেখা যায়, বুলেটটি তার পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক ভেদ করে বেরিয়ে আসে। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে কেউ তাকে ফোন করে জানায়, তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

রাজিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘খবরটি শুনে, আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসার নিচে নেমে দেখি আমার স্বামীকে আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে বাসার সামনে নিয়ে এসেছিল তাদের সহায়তায় আমার স্বামীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে অস্থির পরিস্থিতি থাকায় পোস্টমর্টেম না করেই আমরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে আসি এবং সেই রাতেই তাকে দনিয়া কবরস্থানে দাফন করি।’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, শনির আখড়া বাসস্টপ থেকে প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে আমেনা ভিলার সামনে ওই সময় ‘হেলমেট বাহিনী’ ও ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকের পুলিশসহ প্রায় ৪০ জন লোক নির্বিচারে গুলি ছুড়ছিল। স্থানীয় লোকজন জানায়, ওই দিন গুয়ালবাড়ি মোড়ে ঘটনাস্থলেই জসিমসহ অন্তত ছয়জন নিহত হন এবং খুনিরা কয়েকজনের লাশ নিয়ে যায়।

রাজিয়া বলেন, ‘খুনিরা আমার স্বামীর লাশ গুম করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু লোকজন তার লাশ নিতে দেয়নি। তারা জসিমকে চিনতে পেরে খুনিদের প্রতি ইটপাটকেল মেরে তার লাশ রেখে দেয়।’ খুনিদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেকে এতিম করেছে। যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনুন।’

রাজিয়া নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু তার শাহাদাতের পর থেকে আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’

একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজিয়া আরও বলেন, ‘আমি দুবার স্ট্রোক করেছি, আমি জানি না আমি কতদিন বাঁচব। আমি চলে গেলে আমার ছেলেটার কি হবে! সে তো একা হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি।’

শোকাহত রাজিয়া আরও বলেন, কয়েক বছর আগে আমার বাবা ও শ্বশুর দুজনই ইন্তেকাল করেছেন। এ কারণে আমাদের দেখারও কেউ নেই। আমার একমাত্র ছেলে জীবন আহমেদ (২১) এখন আমার অবলম্বন। সে একটি কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করে। তাই দিয়ে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category