সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বারইগ্রাম জামিয়া ইসলামীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রায় চারমাস থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। উপজেলার লাউতা ইউনিয়নে বারইগ্রাম বাজারের অদূরে ২০০৫ সালে স্থাপিত এই মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গ্রাম্য রাজনীতির জের ধরে মাদ্রাসা তালাবদ্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এ প্রতিষ্টানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মাদ্রাসা ও এতিমখানা খুলে দেয়া এবং সম্প্রতি সৃষ্ট নানা ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থী ফাহিম ও আরিয়ানের মধ্যে হাতাহাতি হয়। যা মাদ্রাসার শিক্ষকগণ দ্রুত সমাধান করে দেন। তবে আরিয়ান বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানালে তারা উত্তেজিত হয়ে মাদ্রাসায় প্রবেশ করে অপর শিক্ষার্থী ফাহিমের উপর হামলা চালান। হামলায় মাদ্রাসার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ফাহিম আহমদের পিতা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে আরোও উল্লেখ করা হয়, এসব ঘটনার জের ধরে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা শামীম আহমদকে মারধর করা হয়। মাদ্রাসা বন্ধ করে রাখা ও এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারনে গত ৪ ফেব্রুয়ারীর পরীক্ষা এবং ১২ ফেব্রুয়ারীর বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল বাতিল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সুমন আহমদ জানান, মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। তারা শিক্ষার্থীদের শাসনের নামে ব্যাপক মারধর করেন। তাছাড়া মুহতামিম নিজের ইচ্ছামতো মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন।
সরজমিন পরিদর্শনে জামিয়া ইসলামীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। বিষয়টি সমাধানের জন্য লাউতা ইউপি চেয়ারম্যান দেলোওয়ার হোসেন ও মুল্লাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নানের মধ্যস্থতায় সামাজিক নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুপক্ষের সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টা মিমাংসা করা সম্ভব হয় নি এখনো পর্যন্ত। দীর্ঘদিন থেকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা বন্ধ থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ হুমকির মুখে। শিক্ষকরাও বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসার বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দ্বারস্থ হন এলাকার মুরব্বিরা।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগকারী মাদ্রাসার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর আকিল ও প্রতিষ্টাতা মুহতামিম মাওলানা ফখরুল ইসলাম জানান, অপরপক্ষ অফিস রুমের চাবি ছিনিয়ে মাদ্রাসা তালাবদ্ধ করে রেখেছে। তারা মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছে যাতে মাদ্রাসায় পড়াশোনা চালু করা না হয়।
লাউতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে বেশ কয়েকবার সমঝোতার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন পক্ষ ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, আমার কাছে একটা পক্ষ এসে মাদ্রাসা ও এতিমখানা বন্ধসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেছে। আমি তাদের কথা শুনে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষকে আমার অফিসে নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। তাছাড়া আমি পরিস্কার করে বলে দিয়েছি মাদ্রাসায় শিক্ষা কার্যক্রমে কোন ধরনের ব্যক্তয় না ঘটে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি।