• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হলো না শিহাবের

ডেস্ক রিপোর্ট / ১২৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকার একটি কারখানায় গত আড়াই বছর ধরে ফার্নিচার তৈরির কাজ শিখছিলেন হৃদয় হোসেন শিহাব (১৮)। তার স্বপ্ন ছিলÑ আগামী বছরের শুরুতে বিদেশে পাড়ি জমাবেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে গেল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এই তরুণ।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের আজগর হাওলাদারের কান্দির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আলম হাওলাদারের ছেলে শিহাব। বাবা দিনমজুর। কখনও কখনও গাড়ি চালাতেন। এতে সংসার ঠিকভাবে চলছিল না। পরিবারের অভাব ঘোচাতে কাজের সন্ধানে শিহাব চলে

যান ঢাকা। গত ১৯ জুলাই, শুক্রবার জুমার নামাজের পরে খাওয়া-দাওয়া করে বাসা থেকে কারখানায় যাচ্ছিলেন শিহাব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার

মধ্যে পড়ে যান তিনি। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। নিজ পরনের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে শরীরের রক্ত ঝরা বন্ধ করার চেষ্টা করেন শিহাব। ততক্ষণে দেহ নিস্তেজ হতে থাকে। এ সময় তাকে চিনতে পেরে ওই এলাকার লোকজন তার দোকান মালিক মনিরকে জানান। পরে স্থানীয় লোকজন ওই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত শনিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পরিবার এখনও শোকে মুহ্যমান। শিহাবের মা নাসিমা বেগমের চোখেন পানি ঝরছে অঝোরে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, আমার বাবার তো কোনো দোষ ছিল না। কেন ওরা আমার বাবারে গুলি করল? আমার বাজানে কয়দিন আগেও কইছিলÑ ‘কাজ পুরোপুরি শেখা হইলে আমি বিদেশে যামু। মা, তোমাগো আর বেশি দিন কষ্ট করতে হইব না।’ আমার বাবারতো বেদেশ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হইল না! আমারে আর মা কইব না। আমি কার কাছে বিচার চামু? আমার বাজানরে গুলি করে মারা হইল। কোনো আসামি কি গ্রেপ্তার হইছে? কে করব ওগো বিচার? আল্লার কাছেই বিচার দিলাম।

এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক বাবা শাহ আলম হাওলাদার। কারও সঙ্গেই তিনি আগের মতো কথা বলতে পারছেন না। মানুষ দেখলে শুধু চেয়ে থাকেন। কখনও বাড়ির উঠানে হাঁটেন, কখনও বাড়ির বাইরে রাস্তা দিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ান। সব আশা, স্বপ্ন যেন শেষ হয়ে গেছে তার।

শিহাবের দুলাভাই আবুল হোসেন ফকির জানান, এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি শহীদ শিহাবের দরিদ্র পবিবার। সরকার সহযোগিতা করলে তার অসহায় বাবা-মায়ের আর্থিক কষ্ট কিছুটা কমত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category