বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল কিন্তু আকৃতি খুবই সুন্দর। তাই বাবুইকে শৈল্পিক পাখি বলা হয়। নিজের ঘর সাজাতে তাদের কোনো জুড়ি নেই। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে নিপুণ কারুকার্যখচিত বাবুই পাখি ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা। এক সময় গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাট ও প্রকৃতি দাবড়ে বেড়ানো এ পাখিগুলো কালের আবর্তনে বিলুপ্তপ্রায়।
সাহিত্যেও স্থান দখল করে আছে বাবুই পাখি। চোট্ট এ পাখি নিয়ে রয়েছে অনেক কবিতা। এর মধ্যে কবি রজনীকান্ত সেনের ছড়াটি পেয়েছে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা ‘বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে…।’
আগে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা সড়কের পাশে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে আপন ঘর নির্মাণে ব্যস্ত শিল্পমনা বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখন এসব দৃশ্য তেমন চোকে পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা বিলীন হয়ে গেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তাল, খেজুর, নারিকেল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। সেই বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত।
গালা ইউনিয়নের আলমদী এবং সাখিনী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের তালগাছ এবং খেজুর গাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দে জুড়িয়ে যায় মন। কয়েক বছর ধরেই বাবুই পাখি এখানে বাসা বাঁধে। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে হওয়ায় তারা এখানে বাসা বাঁধে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, কালের বিবর্তনে তালগাছ, নারিকেল গাছ ও খেজুর গাছ কমে যাওয়াসহ বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে বাবুই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাবুই পাখিসহ সকল শ্রেণির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি ও কীটপতঙ্গ পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে। এগুলো সংরক্ষণে এখনই আমাদের সবার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।