বিজয় দিবস উপলক্ষে লালমনিরহাটের বড়বাড়ী আবুল কাশেম ডিগ্রি কলেজে স্থানীয়দের উদ্যোগে বউ-জামাইমেলার উদ্বোধন করা হয়। এ মেলা উদ্বোধন করেন সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। গতকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এবার বউ-জামাইমেলায় মৎস্য স্টল, পিঠা স্টল ও অন্যান্য প্রসাধনী পণ্যের স্টল স্থান পেয়েছে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বউ-জামাইমেলার প্রথম দিন উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গলায় মালা ও শাড়ি পরে মেয়ে-জামাইরা মেলায় এসে আনন্দ উপভোগ করছেন। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ও আশপাশের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন। মেলায় হরেক রকমের পিঠা ও নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় প্রতিদিন সকালে মৎস্য উৎসব ও বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে পিঠা উৎসব।
মেলা উপলক্ষে সদরের উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এসেছেন মেয়ে ও জামাই। গলায় মালা ও লাল শাড়ি পরে নতুন রূপে সেজে-গুজে মেয়ে-জামাই এসেছেন মেলায়। জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে নিতে কিনছেন বড় মাছ ও নানা রকমের মিঠাই। নতুন জামাই বাড়িতে আসবে বলে শ্বশুরদেরও কিনতে হচ্ছে বড় বড় মাছ।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, বিক্রেতারা মাছ ও পিঠার দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। তবে দাম যাই হোক, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মেলায় আসা বউ ও জামাই পছন্দমতো মাছ ও পিঠা কিনে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আড়তেই দাম চড়া। এ কারণে পরিবহন খরচ নিয়ে এ মাছগুলো বিক্রি করতে হয়। মেলায় বিক্রি বেশি হয়, তাই লাভ কম করেন। পিঠা বিক্রেতারা বলছেন, সব জিনিসেরই দাম বেশি হওয়ায় এ বছর পিঠা দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।
মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফারুক সিদ্দিকী জানান, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বউ-জামাইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। জামাইমেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবে আর হরেক রকম পিঠা খাবে। এ ছাড়াও নতুন প্রজন্মের শিশুরা বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতির মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। সব মিলিয়ে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই মূলত এ ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ মেলাটির তাৎপর্য হলো এ অঞ্চলের জামাইরা বউ নিয়ে সকাল বেলায় এ মাছের মেলায় আসেন। বড় বড় মাছ নিয়ে শশুরবাড়িতে যাবেন। শাশুড়ি দুপুরের রান্না করবেন। শশুর-শাশুড়ি ও তার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন মাছের তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন। খেয়ে আবার বিকালে পিঠামেলায় আসবেন। রাত পর্যন্ত চলবে বিভিন্ন গ্রামীণ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।