• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

ব্যাপক রদবদলের পর সক্রিয় হচ্ছে প্রশাসন

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৮২ Time View
Update : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি হলো আজ ৮ সেপ্টেম্বর। এ সময়ের মধ্যে প্রশাসন সকল পর্যায়ে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে।
দেখা গেছে, গত এক মাসে কখনো সরকারি নির্দেশে, আবার কখনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে উচ্চ পদ থেকে শুরু করে নিম্ন পদ পর্যন্ত বদলি, পদোন্নতিসহ নতুন নিয়োগ হয়েছে। টানা দেড় দশকের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার সরকার ছিল। এ সময় যে প্রভাব প্রশাসনের সর্বস্তরে জেঁকে বসেছিল, তার অবসান ঘটাতে প্রশাসনিক এই রদবদল বলে জানা গেছে। এর মূলে রয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন সরকারের চেতনা ও প্রতিশ্রুতি। কিন্তু পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের সহযোগীরা নিজেদের খোলস পাল্টে বঞ্চিত হিসেবে জাহির করে আবার স্বরূপে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে গত এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং বেসরকারি পর্যায়ে রদবদল ও পুনঃনিয়োগের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যাংক-বিমা ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেও এই পরিবর্তন ঘটেছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
সাবেক সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অভ্যুত্থান ঘটাতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিগত সরকারের সময়ে সুবিধাবঞ্চিত ও অন্যায়-অবিচারের শিকার হওয়া লোকজনও ছিলেন। কিন্তু এসব মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুযোগসন্ধানী কিছু লোক ও গোষ্ঠী। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করা এবং রাষ্ট্র ও জনগণের বিপুল ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে। এখন এরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। এই সুযোগসন্ধানীদের চিহ্নিত করে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। তা না হলে প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারের যে অঙ্গীকার তা ব্যাহত হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের বহু বাণিজ্যিক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও নানা কারণে অভিযুক্তরা আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন এবং এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
গোলাম রহমান আরও বলেন, এদের কারণে আবারও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে বা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ লোপাটের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, অনিয়ম-অত্যাচার এবং অবিচার-দুর্নীতির অবসান ঘটাতেই জুলাইয়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগস্টের প্রথম সপ্তাহে অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান হয়েছে। একটি পরাক্রমশালী সরকারপ্রধানকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে ও তার সহযোগীরা জনরোষের মুখে অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন। তাই চূড়ান্ত বিচারে জনগণকে সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পরিবর্তনটা অবশ্যম্ভাবী। তবে তা হতে হবে যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা ও অতীতের সার্ভিস রেকর্ডের ভিত্তিতে। সবাইকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ একটা রাজনৈতিক সরকারের দীর্ঘ মেয়াদ পার হয়েছে। সেখানে সব স্তরে তাদের লোক রয়েছে।
সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ নিজে থেকেই সরে গেলেও অনেকে তা করেননি বা করতে চান না। দেশবাসীকে সুশাসন ও ন্যায়বিচার উপহার দিতে হলে স্বল্প মেয়াদে না হলেও মধ্যম বা দীর্ঘ মেয়াদে এই পরিবর্তনটা সম্পন্ন করার প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে ওপরের দিকে যারা ‘রেগুলেটরি পয়েন্ট অব ভিউ’ বা নিয়ন্ত্রক কিংবা ব্যবস্থাপনাপ্রধানের ভূমিকায় থাকবে এবং নতুন সরকারকে সংস্কারে যথাযথ সহায়তা করবে, তাদের পরিবর্তনটা একটু দেখেশুনে করতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত ও চাকরিপ্রত্যাশী বেকার যুবক রয়েছেন। সরকারের প্রশাসনকে তার নিজস্ব ধারায় চলার সুযোগ করে দিতে হলে সবার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ হলো, সব ক্ষেত্রেই পুলিশ দরকার হয়। এ জন্য পুলিশ ও এর সহযোগী আনসার বাহিনীতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। অন্তত এক হাজার উপপরিদর্শক (এসআই) দ্রুত নিয়োগ দেওয়া দরকার। তাদের পুলিশের মিরপুর, রাজশাহীর সারদা, আনসার বাহিনী ও স্কাউটসের মৌচাক সদর দপ্তর এবং সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে তিন মাসের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে নামানো যেতে পারে। তারপর ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আইন ও মানবাধিকার-সম্পর্কিত দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ কনস্টেবল পদেও বিপুলসংখ্যক নিয়োগ হতে পারে। মোদ্দাকথা সরকারকে সর্বক্ষেত্রে ‘ফ্রেশ ব্লাড’ নিয়োগ দিতে হবে। সরকারি চাকরি করলেই বেতনের বাইরে অর্থ রোজগার করা যায়- এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হবে না। পুরোনোরা এ ধারণায় অন্ধ হয়ে পড়েছেন। তাই ‘ফ্রেশ ব্লাড’ দরকার।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে, বিশেষ করে প্রাথমিক ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যলয়গুলোতে ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষক ও অন্যান্য জনবলের ঘাটতি পূরণে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় শিক্ষিত বেকারদের নিয়োগ দিতে পারে সরকার। এসবের মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কার-পরবর্তী সার্ভিস ডেলিভারি বা সেবা দিলে তা অন্তর্বর্তী সরকারের চেতনা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category