• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি অর্ধেক

Reporter Name / ১০৬ Time View
Update : বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সংস্কারকাজ ধীরগতিতে চলায় উপজেলার ‍তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। চলতি বছরের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ!

এদিকে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে মই দিয়ে ব্রিজে উঠতে হচ্ছে। জেলা সদরে যেতে হলে সিংজুরী, পয়লা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অন্তত ১০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হওয়া ছাড়াও কৃষিপণ্য পরিবহনেও দ্বিগুণ ব্যয় হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, সেতুর কাজ দ্রুত শেষ না হলে স্থানীয়দের আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার ঢুলন্ডি সিংজুরী আঞ্চলিক পাকা সড়কের পেঁচারকান্দা এলাকায় ২০০৮ সালে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ১১০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তবে নদীর উত্তর পাশে বন্যার কারণে সেতুটির অ্যাপ্রোচ সড়ক বিলীন হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ২৫.৮ মিটার বৃদ্ধিসহ পুরো সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেসার্স মিতু ট্রেডার্স জামালপুর নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই পথে যারা চলাচল করছেন তারা ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতুতে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আর যারা সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করছেন তারা সেতু দিয়ে যেতে না পারায় বাধ্য হয়ে টাকা খরচ করে খেয়া পার হচ্ছেন। আর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে অল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে। স্থানীয়দের মতে, ঠিকাদারের গাফিলতি আর প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যকর তদারকির অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চরকশুন্ডা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ সব পেশার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন।’

সিংজুরী ইউনিয়নের আশাপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘আমাগো গিরামের (গ্রামের) শাকসবজি ও ফসলাদি বেচার নিইগ্যা (জন্য) বাইন্যাজুরি, বরংগাইল ও ঘিওর হাটবাজারে যাওন নাগে (যেতে হয়)। এই বিরিজট্যা (ব্রিজটি) ঠিক ওইলে আমাগো অনেক পথ কইম্যা যাইত (কমে যেত)। এতে কইরা আমাগো সময়ের লগে কয়ডা ট্যাহাও (টাকা) বাঁচতো। এহন আমাগো পিরায় (প্রায়) ৭-৮ মাইল বেশি পথ ঘুরন নাগতাছে। তয় বিরিজটার কাম সময়মতো অইলে কৃষকদের উপকার অইতো।’

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমাদের কলেজে যেতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। এই সেতু ঠিক না থাকায় নদী পারাপারে নৌকা ব্যবহার করতে হয়। অধিকাংশ সময়ই অপেক্ষা করতে হয় নতুবা মই বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়। আর মই বেয়ে সেতুতে উঠা মেয়েদের জন্য আরও বিপদজনক। ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করেন না। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারদেরও এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই।’

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সাইংজুড়ি গ্রামের স্কুলশিক্ষিকা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্কুলে যেতে আমাকে প্রায় এক ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বের হতে হয়। অধিকাংশ সময় খেয়া পাই না। তখন বাধ্য হয়ে মই বেয়ে সেতু পার হই। যা আমার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে বর্ষার সময় এই সমস্যা আরও বাড়ে। তাই দুর্ভোগের ব্যাপারটা চিন্তা করে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।’

সিংজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘ওই সেতুটি আমাদের এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ১৫-২০টি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানাই।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পিন্টু সাহা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন এবং বর্ষার কারণে কাজের শুরুতে দেরি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে আগামী জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ঘিওরে যোগদান করেছি। শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category