পবিত্র মাহে রমজান মাসেও তেলের তেলেসমাতিতে ভোক্তাদের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। অসাধু ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন শুধু মাত্র তেলের সংকট দেখিয়ে। প্রতিটি পাইকারি দোকানে বিভিন্ন ওজনের তেল স্টকে থাকা সত্বেও খুচরো দোকানদারদের কাছে সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন তেল। ব্যাবসায়ীদের তেল কারসাজিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনছেন প্রয়োজনীয় এই পণ্য।
বিয়ানীবাজার পৌরশহররের ভুষিমাল ব্যাবসায়ীরা বলছেন, আড়তে তেল সংকট থাকায় ডিলারদের কাছে ঢাকা থেকে তেল আসছে না। যার ফলে বিয়ানীবাজার উপজেলার খুচরো দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গত সপ্তাহে যারা বাজারে সয়াবিন তেল কিনেছেন এ সপ্তাহে এসে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবী ব্যাবসায়ীদের। আর ক্রেতারা বলছেন গ্রামের ছোট ছোট দোকান গুলোতে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পৌর শহরের যে দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। শহর ছাড়া গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন কিংবা পাম ওয়েল নেই বললেই চলে। সব মিলে রমজানে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পণ্য। এ অবস্থায় বাজার করতে আসা এক ক্রেতা জানান, গত সপ্তাহে বাজারে এসে সয়াবিন তেল কিনেছিলেন। দাম অনেকটা কম ছিলো। কিন্তু রমজানের খরচ করতে এসে দোকানে দেখা যাচ্ছে তেলের সংকট। বিক্রেতাদের কাছে তেল চাইলে তারা দাম হাকাচ্ছেন বেশী। প্রশ্ন করে জানতে চাইলে বলছেন, বাজারে তেল নেই। প্রশ্ন হলো, কেনো?দেশে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার এক লাখ টনের বেশি আমদানি হয়েছে। এছাড়া পাইপলাইনে আছে আরও ৮ লাখ টনের বেশি, যা দেশে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। তারপরও বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও। বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর পেছনে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণের প্রশ্ন, এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কবে?সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে ফের দাম বাড়াতে দেশের ৬-৭টি কোম্পানি ভোক্তাকে জিম্মি করে রেখেছে। সরবরাহ কমিয়ে তেলশূন্য করা হয়েছে বাজার। কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ থাকলেও অদৃশ্য শক্তির কাছে তারা বারবার মাথা নত করছে। এতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে সেই চিহ্নিত সিন্ডেকেট। ফলে বাজারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন ভোক্তা।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের উপজেলা পয়েন্ট এর ইকরা ভেরাইটিজ স্টোরের মালিক জয়নাল উদ্দিন জানান, গত কয়েকদিন পূর্বেও আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ লি. সয়াবিন তেল ৮৫২ টাকা করে কিনেছি, পাম ওয়েল ছিলো এর কিছু কম। সেই সয়াবিন তেল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমাকে কিনতে হচ্ছে ৯৯০ টাকা দরে। তাহলে এবার বলেন, এই সয়াবিন তেল আমাকে কত দামে বিক্রি করতে হবে। এই ব্যবসায়ীও অকপটে স্বীকার সয়াবিন তেলের বাজার বড় একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিন্মি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েক মাস ধরে দেশের কয়েকটি বোতলজাত কোম্পানী তাদের কাছে তেল সরবরাহ করছে না। তিনি জানান, রোজার আগে বাজারে সব শ্রেণির মানুষ কেনাকাটা করে। আর এ সময় কোম্পানিগুলো তেল দেওয়া বন্ধ করেছে। এতে বাজারে কোনো বোতলজাত তেল নেই। নতুন করে দাম বাড়াতেই কোম্পানিগুলো এমন করছে। সরকার দাম বাড়িয়ে দিলেই বাজারে তেলের অভাব থাকবে না। ডিলাররাও আমাদের এমন কথা বলেছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, রমজান মাসে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করবো। কোন ব্যাবসায়ী ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।