• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

পঞ্চপাণ্ডব সিন্ডিকেটে বন্দি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৮৯ Time View
Update : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


 

গত মে মাসে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইটের টিকিটের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এই সিন্ডিকেটকে বিমানের পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়, যারা মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় গত ১০ বছর প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ, বদলি, মামলা, পদোন্নতি ও কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমন পরিস্থিতিতে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়সাপেক্ষ হলেও এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই বিমানকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার উপযুক্ত সময়।
বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের অদৃশ্য কালো-হাতের প্রভাবে বিমানে গড়ে উঠেছিল পঞ্চপাণ্ডবের সিন্ডিকেট। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও কেনাকাটার কাজ এই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের কথামতো কাজ না করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি বা মামলা দিয়ে হয়রানি করার মতো অভিযোগও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ বছরে এই সিন্ডিকেট বিমান থেকে লুটে নিয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হলেন বিমানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (আইন) রাশেদ মেহের চৌধুরী। বাকিরা হলেন আইটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হক, প্রকল্প ও পূর্ত বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তারেক আলমগীর, করপোরেট ও কোয়ালিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নিরঞ্জন রয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) সাবেক অধ্যক্ষ নজমুল হুদা লেবু।
বিমানের আরেক কর্মকর্তা জানান, তাদের এই সিন্ডিকেটের অন্যতম শক্ত হাত বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার তানজিব। দীর্ঘ আট বছরে তিনবার চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের বলয়ে থাকা ব্যারিস্টার তানজিবের কিছুই হয়নি। তবে গত ২৭ আগস্ট পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রাশেদ মেহের চৌধুরীকেও আইন থেকে ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজনের দায়িত্বে রদবদল হয়েছে।
তবে অভিযোগ আছে, এই সিন্ডিকেটের বাঘা বাঘা কর্মকর্তা রদবদল হলেও তাদের সময় নিয়োগ পাওয়া শিষ্যরা এখনো সিন্ডিকেটের হয়েই কাজ করছে। দীর্ঘ সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকায় এখনো বিমানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এই সিন্ডিকেটের লোকজন রয়েছে। তবে সাবেক পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) ড. মো. সাফিকুর রহমানকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাফিকুর রহমান যেহেতু দীর্ঘ সময় বিমানে কর্মরত ছিলেন, তাই তিনি ভালো জানেন এই প্রতিষ্ঠানের কোথায় কী সমস্যা আছে, কোথায় হাত দিতে হবে। এই সিন্ডিকেট যেহেতু এক দিনে তৈরি হয়নি, তাই এটিকে এক দিনে নির্মূলও করা যাবে না। এটি ভাঙতে কাজ করে যেতে হবে এবং আস্তে আস্তে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে।’
এদিকে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে করা হলেও এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, পরিষদ ভেঙে নতুন করে গড়া হলেও এখানে আমলাদেরই আধিপত্য রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের পরিচালনা পরিষদের সাবেক এক সদস্য বলেন, নতুন এই পরিষদে ১২ জনের মধ্যে বেশির ভাগই আমলা। তাই তাদের এয়ারলাইনস বিজনেস সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা নেই। তবে তারা হয়তো পলিসি মেকিংয়ে সাপোর্ট দিতে পারবেন। তাই বিমানের ব্যবসায় যে ঘাত-প্রতিঘাতগুলো আছে, সেগুলো সম্পর্কে জানে এমন কাউকে দরকার ছিল পর্ষদে। তাহলে তারা ব্যবসায়িক সফলতার জন্য কী প্রয়োজন তা চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এর ফলে বিমানে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আসত। অন্যদিকে এই পরিষদেও বেবিচকের চেয়ারম্যানকে রাখা হয়েছে। অথচ বেবিচক বিমানের রেগুলেটরি বডি। ফলে তাদের এই পরিষদে থাকাটা অনেকটা সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন পরিষদের সাবেক এই সদস্য। একই মত দিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বেবিচক বিমানের একটি রেগুলেটরি বডি। তাই তাদের অনেকজ ধরনের কার্যক্রম থাকে, যার মধ্যে পানিশমেন্টও আছে। ফলে সেই রেগুলেটরি বডি যখন পরিষদের একজন সদস্য হন, তখন অনেক ধরনের কমপ্রোমাইজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য আমার কাছে মনে হয় বেবিচক চেয়ারম্যান বা বেবিচককে বিমানের পরিষদ থেকে বাদ দেওয়া উচিত। অন্যদিকে এটি একটি ভালো দিক যে, এবার বিমানের চেয়ারম্যান এবং এমডি দুজনই বিমানের সাবেক কর্মকর্তা উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, তারা যদি মিউচুয়ালি কাজ করতে পারেন তাহলে একটি ভালো পরিবর্তন আসবে। কারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করার সুযোগ আছে। তাই তাদের সদিচ্ছা থাকলে তারা বিমানকে ঢেলে সাজাতে পারবেন। আর সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো বিকল্প নেই।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের মধ্যে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি কমিটি করা উচিত এবং তার মাধ্যমে দুর্নীতি দমনে কাজ করা উচিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category