প্রথম শ্রেণির বিয়ানীবাজার পৌরসভায় কোনো ময়লার ডাম্পিং স্টেশন নেই। পৌর এলাকার প্রতিদিনের ময়লা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্রভাবে একাধিক স্থানে। কখনো রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের খোলা মাঠে রাখা হচ্ছে ময়লার স্তুপ। এসব জায়গা দিয়ে পথচারীরা চলাচল করতে নাক চেপে ধরতে হয়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে খোলা জায়গায় ময়লার স্তুপ রাখায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের খাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অলিখিতভাবে এবং দাসগ্রামের পৃথক আরেকটি স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে নাগরিকদের। বিগত দিনে মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রামে এবং পৌরশহরের লাসাইতলায় ময়লা ফেলা হলে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে সেসব স্থান থেকে সরে আসা হয়। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা গঠনের শর্তানুযায়ী, পৌর এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, শিল্প এলাকা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। এছাড়া সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন। সর্বোপরি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা ও উন্নত অবকাঠামো থাকতে হয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিয়ানীবাজার পৌরসভায় গড়ে ওঠেনি ডাম্পিং স্টেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩০শে এপ্রিল বিয়ানীবাজার পৌরসভা গঠিত হয়। ১৭ মে ২০০৫ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত হয়ে ৩১ জুলাই ২০১৭ সালে এটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়। ১৮.১৭ বর্গকিঃমিঃ আয়তনের এই পৌরসভায় লোকসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। বড় পরিসরের এই জনগুরুত্বপূর্ণ পৌরসভাটিতে কোনো ময়লার ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে যাবতীয় ময়লা ফেলা হচ্ছে যততত্র ভাবে।
খাসা এলাকার বাসিন্দা সরওয়ার হোসেন বলেন, সড়কের পাশে প্রাইমারী স্কুলের সামনে ময়লাগুলো এনে ফেলা হচ্ছে। ময়লার দুর্গন্ধে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন।
খাসা এলাকার বাসিন্দা ও বিয়ানীবাজার পৌর শহরের ফার্মেসী ব্যাবসায়ী আবুল হাসান বলেন, বিয়ানীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন ময়লা হচ্ছে যা সম্পুর্ন অস্বাস্থ্যকর। শহরের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব যাদের কাধে তারাই বিদ্যালয়ের সামনে খোলা জায়গায় ময়লা ফেলে যাচ্ছে দিনের পর দিন। যার ফলে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে। আমরা এই ওয়ার্ডের নাগরিকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ চাই।
খাসা এলাকার বাসিন্দা ও বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলেন, নাগরিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করা পৌরসভার কাজ অথচ তারা শহরের সমস্ত ময়লা আবর্জনা রাস্তার পাশে এবং বিদ্যালয়ের সামনে ফেলে রাখছে যা নাগরিকদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে এসব ময়লা এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক। তা না হলে শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ময়লা অপসারণে হাতেগোনা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ভ্যানচালক ও ট্রাকচালক নিয়োজিত রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৫ জনের বেশী নয়। এত অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে পুরো পৌর এলাকার ময়লা অপসারণ সম্ভব না।পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থায়ী জায়গা ক্রয়ের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্ধ করা হয়েছিল সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও বাজেট বরাদ্ধ করা হয় ৫কোটি বেশি কিন্তু কাগজে বরাদ্ধ থাকলেও ময়লা ফেলার স্থায়ী জায়গার সংস্থান করতে পারেনি পৌরসভা।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ ব্যানার্জি বলেন, বিয়ানীবাজার পৌরসভা ভবিষ্যতে একটি বড় শহরে পরিণত হবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা ময়লা ডাম্পিংয়ের পরিকল্পিত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করার চেষ্টা করছি।