• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ন

ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন!

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৩০ Time View
Update : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

রাজধানী ঢাকার রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে বিদ্যুতের পিলারে বাসা ভাড়া, চাকরি চাই, হারানো বিজ্ঞপ্তিসহ নানা রকমের পোস্টার দেখা যায়। তবে মেট্রোরেলের ৫৩১ নম্বর পিলারে লাগানো হয়েছে এক ব্যতিক্রমী পোস্টার। লেখা আছে ‘একটি কিডনি বিক্রি করা হবে’। যোগাযোগের জন্য দেওয়া আছে একটি ফোন নম্বর।

পোস্টারে দেওয়া নম্বরের সূত্র ধরে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপনদাতাকে খুঁজে বের করা হয়। গুলিস্তানের ফুটপাতের একটি জুতার দোকানে কর্মরত অবস্থায় দেখা মেলে বিজ্ঞাপনদাতা রণজয়ের। জীবনের রণক্ষেত্রে যেন এক আহত সৈনিক তিনি। পুরো নাম রণজয় রায়। বয়স ৪০। বাড়ি দিনাজপুরের মাঝিপাড়ায়।

সংসারের সুখের আশায় শুরু করেন রাইস মিলের ব্যবসা। শুরুর দিকে বেশ ভালোই চলছিল। এর মধ্যে বিয়েটাও সেরে ফেলেন। ঘরে এখন সাড়ে তিন বছরের এক সন্তান। হঠাৎ করে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। অন্যদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট বোন তিন সন্তান নিয়ে ওঠেন রণজয়ের সংসারে। ১৪ সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় রণজয়কে।

এদিকে চিকিৎসার অভাবে মারা যান রণজয়ের বাবা। মা হৃদরোগে আক্রান্ত। গুলিস্তানের মতিউর পার্কে বসে নিজের জীবনের গল্প শোনাচ্ছিলেন রণজয়। কিন্তু কিডনি কেন বিক্রি করতে হবে? প্রশ্ন শুনে আশপাশ দেখে নিয়ে বললেন, ‘কী বলব ভাই। নিজের আপন মা-স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে পাওনাদারদের অত্যাচারে। বাচ্চা ছেলেটা আমাকে ফোন দিয়ে কান্না করে। ঘরের ছাগল থেকে শুরু করে ফ্রিজটা পর্যন্ত নিয়ে গেছে কিস্তির টাকা না পেয়ে। আমি এখন কী করব বলেন?’

স্থানীয় এনজিও, শ্বশুরবাড়ি, বন্ধুবান্ধব সবার কাছ থেকেই ঋণ করেছেন তিনি। কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হয়ে ঋণের ফাঁদে আটকে যান রণজয়। কোনোভাবেই যখন আর উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না, চুপ করে চলে আসেন ঢাকায়। এই আশায় যে, ঢাকায় নাকি টাকা ওড়ে। কিন্তু সেই টাকা কি রণজয় ধরতে পারবেন?

পেট চালাতে কাজ নেন জুতার দোকানের কর্মচারী হিসেবে। কিন্তু ৫ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে? সেই চিন্তা থেকে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন রণজয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কিডনি বিক্রির পোস্টারও লাগিয়ে দেন। প্রতিদিন আশায় থাকেন যদি কোনো ক্রেতা পান।

এ বিষয়ে রণজয় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেকে ফোন করেছে। কেউ কিনতে চায়, কেউ আবার সান্ত্বনা দেয়। ৪-৫ লাখ টাকা দিলেই বেচে দেব।’

মায়ের চিকিৎসার খরচ, স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ আর ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতিদিনই নিজের সঙ্গে নিজে লড়াই করে যাচ্ছেন রণজয়। অপেক্ষায় আছেন ভালো সময়ের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category