• বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

খেজুরের গুড়ে ১৫০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১১০ Time View
Update : বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে খেজুর গুড়ের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ততা বেড়েছে। কৃষি অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর খেজুর গুড় থেকে ১৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুড় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইনেও গুড় বিক্রি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা খাঁটি গুড়ের জন্য বেশি দাম নিচ্ছেন।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতে ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডার মধ্যে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করছেন। পরে তা জ্বাল দিয়ে তৈরি করছেন গুড়। ওই গুড় রাজশাহীর বানেশ্বর, বাঘা, ঝলমলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে বানেশ্বর হাট। আর সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার বাঘার হাট বসে। ওই দুই হাটেই সবচেয়ে বেশি গুড় বেচাকেনা হয়।

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর জেলায় খেজুর গুড় থেকেই ১৪১ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এই হিসাব শুধু গাছি পর্যায়ের। এদিকে রাজশাহীর খেজুর গুড় সুস্বাদু বলে গত কয়েক বছরে অনলাইনেও বিক্রি বেড়েছে। সেই গুড়ের দামও কিছুটা বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ১১ লাখ ৮ হাজার ১৮টি খেজুরগাছ রয়েছে। একটি গাছ থেকে বছরে ২০ কেজি খেজুরের রস হয়। তা থেকে আট কেজি গুড় হয়। ওই হিসাবে মোট গুড়ের উৎপাদন হতে পারে ৮৮ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৬ কেজি বা ৮ হাজার ৮৬৪ টন। আর বিক্রি হবে ১৪১ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অনলাইনের বাজার ধরলে মোট গুড় বিক্রি হবে ১৫০ কোটি টাকার বেশি।

সম্প্রতি বানেশ্বর, বাঘা, চারঘাটসহ বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই জমে উঠেছে খেজুর গুড়ের হাট। হাটগুলোয় পাটালী গুড়, সারা গুড়, বাটি গুড়, খুড়ি গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খেজুর গুড়ের দাম রাখা হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে ৮০০ থেকে ১ হাজার মণ গুড় আমদানি হয় হাটগুলোয়। রাজশাহীতে গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় চাহিদাও বেশি। ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে কিনে এসব গুড় ক্যারেটে সাজিয়ে ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

ঢাকা থেকে গুড় কিনতে এসেছেন রুবেল আহসান। তিনি বলেন, ‘প্রতি হাটে ৪ থেকে ৫ টন খেজুর গুড় কিনে সেগুলো প্যাকিং করে ঢাকায় পাঠাই। আমার মতো এরকম আরও ১০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা রাজশাহীর বিভিন্ন হাট থেকে গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান।’

বাঘার আড়ানি এলাকার গাছি জুয়েল রানা জানান, অনেকে খেজুরের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে দেন। এসব গুড়ের দাম কম। এগুলো স্থানীয় হাটে পাইকাররা কিনে নেন। সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। কিন্তু ইদানীং অনলাইনের উদ্যোক্তারা আগেই জানিয়ে দেন, টাকা বেশি লাগলেও তারা দেবেন, কিন্তু গুড় হতে হবে খাঁটি। যেসব গুড়ে চিনি মেশানো হয় না। এগুলোর দাম বেশি। গাছিই প্রতি কেজি গুড়ের জন্য ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নেন।

পুঠিয়া উপজেলার ব্যবসায়ী আসিফ ইকবাল অনলাইনে আম, খেজুর গুড়সহ নানা কিছুর অর্ডার নেন। তারপর কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন ক্রেতাদের কাছে। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী রাজশাহীর গুড়ের সুনাম আছে। কিন্তু খরচ ওঠে না বলে বেশির ভাগ গাছি চিনি মিশিয়ে দেন। এতে স্বাদ কমে যায়। এ জন্য অনলাইনের উদ্যোক্তারা গাছিদের বেশি দাম দিয়ে খাঁটি গুড় নেন। ফলে বাজারের চেয়ে অনলাইনে গুড়ের দাম কিছুটা বেশি হয়। চলতি মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে প্রতি কেজি খেজুর গুড় বিক্রি করছি। তবু নিরাপদ গুড় পেতে প্রচুর অর্ডার আসে।

বাঘা বাজারের ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার এনামুল হক বলেন, ‘সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার বাঘায় গুড়ের হাট বসে। শীতের সময় প্রতি হাটে শতাধিক টন গুড় বেচাকেনা হয়। ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুড় যায়। গত বছর মানভেদে কেজিপ্রতি গুড় ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এবার সব জিনিসের দাম বাড়ায় গুড়ও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজারে ওঠা গুড় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এবার শুধু বাঘাতেই ৫০-৫৫ কোটি টাকার গুড় বেচাকেনা হবে। ফলে উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টাকা আয় করবেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বলেন, ‘ছয় থেকে সাত বছর বয়সের মধ্যে রস দেওয়া শুরু করে খেজুর গাছ। একটি গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত রস দেয়। চলতি মৌসুমে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার টন। গত নভেম্বর থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ফলে এই খেজুরের গুড়কে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। এবার জেলায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বাণিজ্য হবে আশা করছি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category